Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

ঢাকার বুকে যেন একখণ্ড চট্টগ্রাম

রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘মেজবান ও মিলনমেলা’। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ৩০ হাজার লোকের সমাগমে মোহাম্মদপুর সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠ যেন ঢাকার বু‌কে একখণ্ড চট্টগ্রাম। 

শনিবার সকাল থেকে ১০টা থে‌কে শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা। সকাল পেরিয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেজবানে উপস্থিত হতে থাকেন অতিথিরা। মেজবান উপলক্ষে মাঠে টানানো হয় শামিয়ানা। ছিল সংশ্লিষ্ট আয়োজনকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের স্টল। সকাল থে‌কে বিকাল পর্যন্ত একটানা চ‌লে মেজবান। ‌মেজবা‌নের খাবা‌রের ফাঁকে ফাঁকে মনোমুগ্ধকর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় গান প‌রি‌বেশন করা হয়। মেজবান উপলক্ষে চট্টগ্রামবাসীর মিলন‌মেলা পরিণত হয় আনন্দ উৎস‌বে। 

সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন জামালের সভাপতিত্বে ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন হিরোর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক মুখ্যসচিব ড. মো. আবদুল করিম। 

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মেজবান কমিটির আহ্বায়ক ও সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মল্লিক এবং সদস্য সচিব মো. গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী ‘চট্টলশিখা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং প্রতিবারের মতো এবারও সমাজের নানা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পাঁচ জন বিশিষ্টজনকে ‘চট্টগ্রাম সমিতি পদক’ প্রদান করা হয়েছে। 

পদকপ্রাপ্তরা হলেন- শিক্ষা সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী (মরণোত্তর); শিল্প, বাণিজ্য ও সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু (মরণোত্তর); চট্টগ্রাম সমিতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আবু আলম চৌধুরী; ‘সাহিত্যে’ অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আহমদ মমতাজ (মরণোত্তর) এবং কৃষি সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শাইখ সিরাজ-কে সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে আবু আলম চৌধুরী অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন।

এরপর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। বলীখেলার উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

এসময় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মেজবান ও বলীখেলা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য হিসেবে সুদীর্ঘকাল কাল থেকে পরিচিতি। ঢাকায় অবস্থানরত চট্টগ্রামবাসী এ ঐতিহ্যকে ধারণ করে আজকে এই মেজবান ও বলীখেলা আয়োজন করেছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। চট্টগ্রামবাসী এ সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে সবসময় লালন করে। এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনে সমিতির জীবন সদস্যবৃন্দসহ সকলকে ধন্যবাদ।

এবার রাজধানী বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার সদস্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাদের সকলের পদচারণায় মুখরিত হয় মেজবান ও মিলনমেলা। অনেকে পরিবার সদস্যদের নিয়ে এই মেলায় এসেছেন। করোনা মহামারির জন্য গত তিন বছর এই মেজবান অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই এবার উচ্ছ্বাসটা ছিল অন্যরকম।

দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ সপরিবারে রাজধানীর তেজগাঁও থেকে এসেছেন ফটিকছড়ির শামীমা ইসলাম (৪২)। অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের বড় অনুষ্ঠানে পরিবারের সকলেই আসার চেষ্টা করি। এখানে পরিচিত মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়। অনেকের সাথে নতুন করে পরিচয় হয়। ছেলে-মেয়েরাও অনেক আনন্দ পান। মোটকথা, এখানে আসলে মনে হয় যেন চট্টগ্রামে আছি। কারণ মন খুলে পরিচিতরা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি। এর মধ্যে দিয়ে শক্ত একটা বন্ধনও তৈরি হয়ে যায় বলা চলে।

পটিয়ার সন্তান ব‌্যাংকার আনোয়ারুল আজম ব‌লেন, মেজবা‌নে ঢাকায় বসবাসরত সবার স‌ঙ্গে দেখা হয়। এটাই আনন্দ। অন‌্যবা‌রের মত অনেক বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজ‌নের স‌ঙ্গে দেখা হ‌য়েছে। এই ধর‌নের অনুষ্ঠানের মধ্য দি‌য়ে আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

আয়োজক কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাংবা‌দিক তৌ‌হিদুর রহমান জানান, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ৩০ হাজার লোকের সমাগম হয় এই অনুষ্ঠানে। আগতদের মধ্যে ছিলেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, বেসরকারি সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং দেশের বিশিষ্ট ও খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

অনুষ্ঠানে সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল করিম, সদস্য সচিব অ্যাড. মাসুদ আলম চৌধুরী, ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ খালেদ ও হাসপাতাল কমিটিসহ তিন কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং নির্বাহী পরিষদের সকল সদস্য ও মেজবান কমিটির বিভিন্ন উপকমিটির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও সদস্যবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাবুদ, নির্বাহী পরিষদের সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার তাজুল ইসলাম চৌধুরী, এএম মনসুর উল আলম, মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. মহিউল ইসলাম মহিম, রাজীবুল হক চৌধুরী, আলহাজ মো. খোরশেদুল আলম, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ নাছের (নাছির), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহ্মুদ সালাহ্উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।

চট্টগ্রাম মোসলেম ছাত্র সমিতি নামে ১৯১২ সালে যাত্রা শুরু করেছিল চট্টগ্রাম সমিতি। শতবর্ষী চট্টগ্রাম সমিতি সমগ্র দেশে মেজবানকে পরিচিত করেছে। চট্টগ্রামের মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি মেজবান। মেজবান বর্তমানে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ যেখানে প্রবাসী চট্টগ্রামবাসী আছেন সেখানে মেজবানের আয়োজন করে থাকে।