Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

ধুঁকে ধুঁকে চলছে জীবন

বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ছে। খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপণ্যের দাম ধীরে ধীরে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেড়েছে লঞ্চ-বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহনের ভাড়া। জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বেশ আগেই বেড়েছে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। কিন্তু, নিম্ন আর মধ্যবিত্ত মানুষের আয় বাড়েনি, বরং অনেক ক্ষেত্রে কমেছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় ধুঁকে ধুঁকে চলছে জীবন।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, শান্তিনগর ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে তাদের কষ্টের কথা। সাধ আর সাধ্যের ফারাকের কথা। কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানের চালের দাম কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা বেড়েছে।

বুধবার (১৭ আগস্ট) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, যেখানে প্রতি কেজি চালের দাম ৫০ পয়সা বাড়ার কথা, সেখানে ব্যবসায়ীরা ৪ টাকা বাড়িয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, বাজারের চিত্র আরও ভিন্ন। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আজ মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫-৫৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে এ চাল বিক্রি হতো ৪৫-৪৬ টাকায়। প্রতি কেজি বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৬০ টাকায়, যা আগে ছিল ৫০-৫২ টাকা। প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ৭২-৭৫ টাকা, আগে ছিল ৬৮-৭০ টাকা। নাজিরশাইল মানভেদে প্রতি কেজির দাম ৭৫-৯০ টাকা, যা আগে ৭০-৮০ টাকা ছিল।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে বাজারে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে, পণ্যের দাম কী পরিমাণে বাড়া উচিত এবং কী পরিমাণে বেড়েছে, এ খবর রাখতে কোনো সংস্থাকে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে, যে যার মতো পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। এতে সব শ্রেণির ক্রেতারা পড়ছেন ভোগান্তিতে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. এম কে মুজেরি বলেছেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি মানে এই নয় যে, ব্যবসায়ীরা যা খুশি তা-ই করার সুযোগ পাবে। বিশ্বের অনেক দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি থাকলেও তার নিয়ন্ত্রণ থাকে সরকারের হাতে। বাংলাদেশেও এ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সরকারের হাতে রাখতে হবে। এজন্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।’

কারওয়ান বাজারের নোয়াখালী রাইস এজেন্সির মালিক আব্দুল মতিন বলেছেন, ‘মিলাররা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে থেকেই চালের দাম বাড়িয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করা চালের দাম বেশি পড়ায় তারা সুযোগটা নিয়েছে। দেশীয় সব চালের দাম কেজিতে ৪-৬ টাকা বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর যেখানে কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা বাড়ার কথা, তখন এসব মিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিলে সিন্ডিকেট করে প্রতি কেজি চালে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে, খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে।'

এদিকে, খুচরা বাজারে আজ প্রতি কেজি মসুর ডাল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১১৫-১২০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ছিল ১৬৫-১৭০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৪৫ ও ৪০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, যার দাম ছিল ১২০ টাকা। তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়, যা ছিল ১৬০ টাকা। কই মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা।

বেকারি পণ্য পাউরুটি, বিস্কুট, চানাচুর, নুডলসসহ নাশতার আইটেমের দাম বেড়েছে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় আকারের পাউরুটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে ৮০-৮৫ টাকা ছিল। ৩০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেট চানাচুর বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যা ছিল ৭৫ টাকা। ৮ পিসের প্যাকেট নুডলস বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, যার দাম ছিল ১৪০ টাকা। এনার্জি বিস্কুটের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা ছিল ৩৮ টাকা। ১০ টাকা বেড়ে পাইনঅ্যাপল বিস্কুটের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি টোস্ট বিস্কুট বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, যার দাম ছিল ১৪০ টাকা। প্রতি লিটার কোকের দাম ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। ৬০০ গ্রাম ওজনের প্রাণ সসের বোতল ৭৫ টাকা, যার দাম ছিল ৬২ টাকা।

হাতিরপুলের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বাজারে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। দাম বাড়ার কারণে অল্প অল্প করে কিনছি। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’

আরেক ক্রেতা মাহফুজ বলেন, ‘শুধু নিত্যপণ্যের দামই বাড়েনি। বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে পানি ও বিদ্যুৎ বিল সবকিছুই বেড়েছে। বাসভাড়া বেড়েছে। বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানো হয়, কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে দাম কমলে একবার বেড়ে যাওয়া জিনিসের দাম আমাদের এখানে আর কমে না।’

ওষুধ কিনতে আসা সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা আসিফ ইকবাল বলেন, ‘প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে। নাপা সিরাপের দাম ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা হয়েছে। অ্যান্ট্রাজল ড্রপ ১০ টাকা ছিল, এখন ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৪ টাকার অ্যামোক্সিসিলিন ইনজেকশন ৫৫ টাকা, ২১ টাকার প্রমেথাজিন ৩৫ টাকা হয়েছে। জিনিসপত্রের পাশাপাশি ওষুধের দাম যেভাবে বাড়ছে, জীবন রক্ষা করাই তো কষ্টকর হয়ে পড়ছে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে। তারা অবশ্যই ব্যবসা করবেন, তবে সেটা যৌক্তিকভাবে। কিন্তু, আমাদের এই চাওয়াটা তারা মানছেন না। এ ব্যাপারে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের অভিযান টিম প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি করছে।’