Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

এশিয়া কাপে নতুন রূপে ফিরছেন সাকিব

বিতর্কের পর ক্রিকেটের বড় আসরে প্রতিবারই নতুন সাকিবের আবির্ভাব ঘটে। ক্রিকেটের বড় টুর্নামেন্টে সাকিবকে অন্যরকম উপভোগ করে ভক্তরা। যেমনটি দেখা গিয়েছে সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। সেমিফাইনাল না খেললেও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ছিলেন তৃতীয় স্থানে। ৮৬.৫৭ গড়ে ৮ ম্যাচে করেছেন ৬০৬ রান। দুই সেঞ্চুরি ও পাঁচ হাফসেঞ্চুরির সুবাদের সর্বোচ্চ গড়ে রান তুলেছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। সাকিব আল হাসানের সামনে এবার এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

দুই গুরুত্বপূর্ণ আসরেই দলকে নেতৃত্ব দিবেন তিনি। যার জন্য ইতোমধ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের অন্য ক্রিকেটারদের তুলনায় সাকিব অনেকটা ভিন্ন। বছরজুড়ে ঐচ্ছিক ছুটিসহ নানা কারণে থাকেন সমালোচনার শীর্ষে। তবে ব্যাট কিংবা বল হাতে মাঠের পারফরম্যান্সে দর্শকদের সব বেদনা ভুলিয়ে দেন নিমিষেই। ব্যাট-বলের জাদুতে উঠেন সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। এবারও সেদিকেই পা বাড়াচ্ছেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে খেলেননি ওয়ানডে সিরিজ। জিম্বাবুয়েতেও ছিলেন না। নিয়েছেন ঐচ্ছিক ছুটি। এরপর ফিরেছেন তাও শত ঝামেলার মধ্যে দিয়ে।

বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি করায় বেশ সমালোচনার শিকার হয়েছেন। বিসিবি সভাপতির কড়া হুঁশিয়ারিতে শেষ পর্যন্ত বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হন। চুক্তি বাতিলের পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও টাইগারদের নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করেন। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত এই দায়িত্বে থাকবেন তিনি। এর আগে এশিয়া কাপ। চলতি মাসের ২৭ তারিখ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গড়াবে এই আসর। যার জন্য অধিনায়কত্ব গ্রহণের পরের দিন থেকেই অনুশীলনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সাকিব। সাকিব আল হাসান অনেকটা সৌখিন ক্রিকেটার। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের মতো কঠোর পরিশ্রম সাধারণত তিনি করেন না। যেটুকু না করলেই নয়, সেটুকুই করেন। অনেক সময় ছুটি কাটিয়ে প্রায় শেষ মুহূর্তে দলের সঙ্গে যোগ দিন। তবে এবার তার দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন এনেছে। বোর্ড সভাপতির সঙ্গে মিটিংয়ের পরের দিন থেকেই মাঠে নেমেছেন তিনি। তাও ঐচ্ছিক অনুশীলন।

সাকিব আল হাসান

চলতি বছর জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা ব্যস্ত সূচি কাটানোর ফলে এখনো দলীয় অনুশীলন শুরু করেনি। কিন্তু সাকিব আল হাসান গত চারদিন ধরে ঐচ্ছিক অনুশীলন করে যাচ্ছেন। কখনো সাংবাদিকদের সামনে আবার কখনো কখনো সবার অগোচরে। প্রথম দিন শুধু দৌড়েই অনুশীলন শেষ করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন কিছুটা লুকিয়ে নিজের প্রস্তুতি নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার অনুশীলন করেন একদম সবার সামনেই। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসরা। প্রায় পাঁচ ওভার ব্যাট করছেন সাকিব। যেখানে একটি বলও রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেননি। যেদিক দিয়েই পেরেছেন উড়িয়ে মেরেছেন। তবে কোনো কোনো শটে পর্যাপ্ত বল প্রয়োগ করতে পারেননি সেটা সাকিব নিজেও বুঝেছেন। সাকিব-মুশফিকদের অনুশীলনের ফাঁকে সাকিবের সঙ্গে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি, ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। এরপর সাকিবের কঠোর অনুশীলন নিয়ে বোর্ড সভাপতি বলেন, সাকিবের সঙ্গে নিয়মিতই কথা হয়। সব প্লেয়ারের সঙ্গেই কথা হয়। সাকিবের কাছে জানতে চাচ্ছিলাম, ওর কী মনে হচ্ছে? কী হতে পারে? একটা জিনিস দেখলাম, সাকিব খুব আত্মবিশ্বাসী, ওর ওই আত্মবিশ্বাস সবসময়ই থাকে। ওর আত্মবিশ্বাস থাকাটা জরুরি এখন। মানে জিততে পারবো, এটা থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, খেলার জন্য খেলতে গেলাম, গিয়ে হারা-জেতা নিয়ে আমার কথা নেই। একটা খেলার মধ্যে জিততে পারবো, এই আত্মবিশ্বাসটা জরুরি। এটা দেখতে পেরেছি, আমি খুশি। সেখানে গিয়ে কী কী হতে পারে তা দেখেছি। ভালোই, আমার কাছে হারা-জেতাটা বড় কথা না। এবার ভালো খেলার চেষ্টা করবে, তাতে সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন: সাকিবকে নিয়ে মুখ খুললেন পাপন

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের প্রধান সমস্যা পাওয়ার হিটিং। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সিডন্সের পাশাপাশি নতুন ব্যাটিং কোচ নিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল বিসিবি। তবে সিডন্সের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আলাপ করার পর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিসিবি। জাতীয় দলের বর্তমান ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স নিজেকেই পাওয়ার হিটিংয়ের বিশেষজ্ঞ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, টাইগার ক্রিকেটারদের ছক্কা হাঁকানোর সমস্যা তিনিই দূর করতে চান। তবে বিসিবি এই এশিয়া কাপেই সিডন্সের পরীক্ষা নিবেন। এই টুর্নামেন্টে সিডন্স তার যথার্থতা প্রমাণ করতে না পারলে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের জন্য নতুন করে চিন্তা করবে বিসিবি। পাওয়ার হিটিং সম্পর্কে নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, আমরা একটা পাওয়ার হিটিং কোচ নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন জেমি বলল তার নাকি এটাতে বিশেষত্ব আছে। তাই আমরা এই এশিয়া কাপটা দেখছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে পরবর্তী বিশ্বকাপ। কারণ খেলা অস্ট্রেলিয়ায়, সেখানে চ্যালেঞ্জও বেশি। ওইসব জায়গায় তো আমরা এমনিতেই স্ট্রাগল করি। সেটার কথা মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। এই এশিয়া কাপে আমরা কিছু জিনিস পরিবর্তন করে দেখতে চাচ্ছি যে সব ঠিক আছে কী না। আর বেশি সময়ও হাতে নেই। হুট করে যে একজন কোচ এনে সব উন্নতি করে ফেলব এটা ভাবা ঠিক হবে না।

এদিকে লিটন দাস ইনজুরিতে থাকায় এশিয়া কাপে টাইগারদের উদ্বোধনী ব্যাটার নিয়ে বেশ সমালোচনার জন্ম হয়েছে। একাদশে আছে মাত্র দুইজন উদ্বোধনী ব্যাটার। যাদের মধ্যে একজন একেবারেই নতুন। এই আলোচনায় জল ঢালতেই বিসিবি কর্তারা বলেছিলেন প্রয়োজনে সাকিব-মুশফিক ওপেনিং করবে। এই বক্তব্য থেকে নতুন মোড় নিয়েছে। সাকিব-মুশফিকের ক্যারিয়ার নিয়ে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। দুইজনই এ পর্যন্ত মাত্র একবার করে উদ্বোধনী ব্যাটার হিসেবে খেলেছেন। মিরপুরে সাকিবের পাশাপাশি মুশফিকুর রহিমও কঠোর পরিশ্রম করছেন। এই দুইজনের পাশাপাশি ওপেনিং পজিশনের জন্য আছে আরেকটি নাম। সেটি হলো শেখ মাহেদি হাসান। বিপিএলসহ বেশ কয়েকটি ম্যাচে ওপেনিং পজিশনে খেলেছেন তিনি।

ডি- এইচএ