Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

কয়লা খালাসের উদ্বেগ রেখেই উৎপাদনে আসছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষের পথে। আগামী মাসেই উৎপাদনে যেতে পারে ভারত ও বাংলাদেশের এই যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু এখনও কয়লা খালাসের পর্যাপ্ত অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। আমদানি করা কয়লা জাহাজ থেকে খালাসে দীর্ঘ সময় লাগছে। দিতে হচ্ছে বিলম্ব ফি।

১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুই ইউনিট রয়েছে। ৬৬০ মেগাওয়াটের এক ইউনিটের জন্য দিনে প্রায় পাঁচ হাজার টন কয়লা পোড়াতে হবে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নদীপথের গভীরতা চার মিটারের কম। এতে মাদার ভেসেল কয়লা নিয়ে জেটিতে ভিড়তে পারে না। লাইটারে (ছোট জাহাজ) করে কয়লা প্রকল্প স্থানে আনতে হয়। ৫৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার মাদার ভেসেলের কয়লা খালাসে লাইটারের ৪৫টি ট্রিপ প্রয়োজন। সাধারণত সাত দিনে কয়লা খালাসের কথা থাকলেও লাগছে প্রায় দেড় মাস। বিলম্ব শুল্ক বাবদ অতিরিক্ত ১২ কোটি টাকা দিতে হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, কয়লা খালাসের জন্য জেটির তিনটি কনভেয়ার বেল্টের মাত্র একটি চালু রয়েছে। এর মধ্যে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সেটিও মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে। এ ছাড়া কয়লার শেড ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা এখনও প্রস্তুত নয়।

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাঈদ আকরাম উল্লাহ বলেন, একটি জেটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসে আরেকটির নির্মাণকাজ শেষ হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তৃতীয় জেটি চালু হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার আগে কয়লা খালাস সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, এখনও জেটিতে অনেকটাই অচলাবস্থা। কারণ কর্তৃপক্ষ এখনও আমদানিকৃত কয়লা খালাসের জন্য লোকবল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তবে এই মেগা প্রকল্পে সবচেয়ে বড় ধাক্কা হচ্ছে এই বিপুল পরিমাণ কয়লার শেড ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা এখনও প্রস্তুত নয়। তাই বিশাল যে স্টোরেজ সক্ষমতা দরকার তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর প্রতিকার কী হবে, তা-ও অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে।

এসব সমস্যার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এবং তারা দ্রুত কার্যকর সহায়তা প্রত্যাশা করেন।

ইঞ্জিনিয়ার সাঈদ আকরাম উল্লাহ বলেন, প্লান্ট কর্তৃপক্ষ একটি জেটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে, যেখানে আনলোডিং সুবিধা আংশিকভাবে চালু রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আরেকটি জেটির নির্মাণকাজ শেষ করতে চেষ্টা চালাচ্ছি এবং আরও দুই মাসের মধ্যে তৃতীয় জেটি চালু করা হবে।’

তিনি বলেন, সংস্থাটি কমিশনিংয়ের প্রাথমিক সময়ের সুবিধাগুলো পরিচালনা করতে কিছু জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে।

গত মাসে প্লান্ট পরিদর্শনের সময় বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট বিআইএফপিসিএলের প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পাণ্ডে বলেছিলেন, অক্টোবরের শেষ দিকে ২এক্স৬৬০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্পের ইউনিট-১ বাণিজ্যিকভাবে চালানোর জন্য প্রস্তুত হবে। কোভিড-১৯ মহামারির পাশাপাশি সঠিক সময়ে মাটি পরীক্ষা না হওয়ায় প্রকল্পটি ১৯ মাসেরও বেশি সময় পিছিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সুভাষ চন্দ্র পাণ্ডে বলেন, বর্তমানে এক মিলিয়ন টন কয়লার মজুত রয়েছে, যা তিন মাসের জন্য দুটি ইউনিটের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। আরও বলেন, পরিবেশগত প্রভাব সক্রিয়ভাবে প্রশমিত করার জন্য সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, বায়ু ও পানি দূষণ কমানোর জন্য কিছু অন্তর্নিহিত ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে একটি ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন পদ্ধতি (এফজিডি), যেটি ছাড়া সালফার ১০-এর নির্গমন নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও বিকল্প পথ নেই। পশুর নদীর দূষণ এড়াতে সমন্বিত বর্জ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম, ফ্লু গ্যাস নির্গমনের জন্য সবচেয়ে উঁচু চিমনি (২৭৫ মিটার) নির্মাণ, কয়লার জন্য একটি অগ্রিম জাহাজ আনলোডার নির্মাণের পাশাপাশি একটি সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত কোল স্টক ইয়ার্ড, কম ছাই ও সালফার সামগ্রীসহ উচ্চ গ্রেডের আমদানি করা কয়লা ব্যবহার।

নির্মাণের সময় সুদের মূলধনসহ চুক্তি পুরস্কারের অর্থায়নের জন্য রপ্তানি-আমদানি ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে এক হাজার ৬০০ মিলিয়ন ডলারের একটি সুবিধা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিআইএফপিসিএল।

গত ৬ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। আগামী অক্টোবরের শেষ নাগাদ প্রথম ইউনিট আর ২০২৩ সালের মার্চে দ্বিতীয় ইউনিট চালুর কথা রয়েছে।