Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

প্রয়াত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ বিসর্জন

ভক্তের কল্যাণে মর্ত্যে দেবী দুর্গার আসার অপেক্ষায় প্রহর গোনা শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার মহালয়ার দিন ঢাকের বাদ্যি, কাসর-ঘণ্টা, মঙ্গল শাঁখ ও উলু ধ্বনিতে মুখরিত ছিল মন্দির প্রাঙ্গণ। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী পূজার্চনার পাশাপাশি চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মন্দিরে মন্দিরে শিল্পীরা একের পর এক পরিবেশন করেছেন বাংলা ভক্তিগীতি, ধ্রæপদী সংগীত। দেবীবন্দনার পাশাপাশি মহিষাসুর বধের কাহিনী নৃতের মাধ্যমেও শিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছেন।

হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই ৩ পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যা’ রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। মহালয়া উপলক্ষে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে করা হয়েছে তর্পণ বিসর্জন। শাস্ত্রমতে দেবীপক্ষের আগের কৃষ্ণা প্রতিপদে মর্ত্যধামে নেমে আসেন পিতৃপুরুষরা। অপেক্ষা করেন উত্তরসূরিদের কাছ থেকে জল পাওয়ার। মহালয়ার দিন অমাবস্যায় তাদের উদ্দেশে জলদানই তর্পণ।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গতকাল ভোরে চণ্ডীপাঠে শুরু হয় মহালয়ার পর্ব। চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফুল, তুলসি ও বেলপাতা দিয়ে করা হয় পূজা। এছাড়া পূর্ব পুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় তিল তর্পণ এবং মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা করা হয়েছে। মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতার এই সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, ভারপ্রাপ্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিনয় জর্জ এবং প্রথম সচিব (রাজনৈতিক ও তথ্য) অনিমেষ চৌধুরী।

গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের পূজা মণ্ডপে মহালয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সব ধর্মের মানুষের। ধর্ম আলাদা হতে পারে, কিন্তু উৎসব সবার। এতে কেউ বিঘ্ন ঘটাতে এলে তাদের পরিণতি ভয়াবহ হবে। গতবছর বিভিন্ন জায়গায় পূজার সময় গণ্ডগোল করার চেষ্টা করা হয়েছিল; এরপরও গত বছরের তুলনায় এ বছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। এটা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। এ বছর অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে পুরো দেশে পূজা উদযাপন এবং প্রতিমা বিসর্জন হবে। মহালয়া উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, স্বামীবাগের লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির, রামসীতা মন্দির, জয়কালী মন্দির, হবিগঞ্জের বাহুবলের জয়পুর শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর মামার বাড়ি শ্রী শ্রী শচী অঙ্গন ধামসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভোর থেকেই শুরু হবে চণ্ডীপাঠ, চণ্ডীপূজা ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা।

বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১ অক্টোবর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ২ অক্টোবর সপ্তমী, ৩ অক্টোবর অষ্টমী, ৪ অক্টোবর নবমী ও ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী। পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন গজে চড়ে। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন নৌকায় চড়ে। গত ২ বছর ধরে করোনা মহামারির কারণে অনেকটাই ভাটা পড়েছিল দুর্গোৎসবের আয়োজনে। তবে এবার পুরনো সেই উৎসবের আমেজে ফিরছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। গত বছর শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার সরকার ও পূজা আয়োজক কমিটি নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর দিচ্ছে।