Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

রাজার রাজত্ব ও চাকাভার তাণ্ডবে ছন্নছাড়া বাংলাদেশ

লড়াইটা এমন সমীকরণে এসে দাঁড়িয়েছে, সিকান্দার রাজা বনাম বাংলাদেশ। যেখানে জিম্বাবুয়ের রাজার বিপক্ষে লড়ে বাংলাদেশের ১১ জন।

অতিথিদের স্লোগান হয়তো এমনই ছিল, ‘রাজাকে থামাও, ম্যাচ জিতে নাও।’ আর জিম্বাবুয়ে দলের ড্রেসিংরুমে নিশ্চিত চলেছে, ‘তোমার সাম্রাজ্য তোমার রাজত্ব।’ শেষমেশ রাজাই জিতে যায় ম্যাচ। তাকে আটকানোর সাধ্য নেই বাংলাদেশের কারো। ৫ উইকেটে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করেছে জিম্বাবুয়ে।

হারারেতে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৩০৩ রান করেও হেরেছিল। সেখানে আজ বাংলাদেশের পুঁজি ২৯০। বোলিংয়ে বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডের মতোই এগিয়েছে। ৪৯ রানে তুলে নেয় ৪ উইকেট। বাংলাদেশের লড়াই ওতোটুকু পর্যন্তই। আর জিম্বাবুয়ের লড়াই শুরু হয় সেখানেই।

পঞ্চম উইকেটে রেগিস চাকাভা ও সিকান্দার রাজার ২০১ রানের রেকর্ড জুটিতে বাংলাদেশ স্রেফ এলোমেলো হয়ে যায়। আগের দিন রাজার সঙ্গে জুটি গড়ে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ইনোসেন্ট কাইয়া। দুজনের ব্যাটিং তান্ডবে বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণ ছিল ছন্নছাড়া। আজ রাজার সঙ্গে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক চাকাভাও তুলে নেন সেঞ্চুরি। জোড়া সেঞ্চুরিতে আবারো পথহারা বাংলাদেশ।

চাকাভা ১০২ ও রাজা ১১৭ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে ৫ উইকেটে জয় এনে দেন। শেষ দিকে টনি ময়োঙ্গার ১৬ বলে ৩০ রানের ঝড় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মুখের হাসি কেড়ে নিতে যথেষ্ট ছিল।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে মাহমুদউল্লাহর ৮৪ বলে ৮০ ও তামিমের ৪৫ বলে ৫০ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ মাঝারিমানের পুঁজি পায়। মাঝে ৪১ বলে ৪১ রান করেন আফিফ হোসেন। এছাড়া শান্তর ৫৫ বলে ৩৮, মুশফিকের ৩১ বলে ২৫ রানের ইনিংস দলের স্কোর বড় করতে অবদান রাখে। কিন্তু তাদের ধীরগতির ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ বড় পুঁজি পায়নি।

মাহমুদউল্লাহ ৮৪ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৮০ রান করলেও তার ইনিংসে ডট বল ছিল ৩৭টি। বাংলাদেশের ইনিংসেও ডট বল ছিল ১৫১টি। ব্যাটসম্যানরা স্ট্রাইক রোটেটের পরিবর্তে বাউন্ডারির দিকেই বেশি তাকিয়ে ছিলেন। তাতেই ব্যাটিংয়ে ভরাডুবি হয়েছে। তামিম যে ৫০ রান করেছে তার ৪৬ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে। মেরেছিলেন ১০টি চার ও ১টি ছক্কা। বাকি ৩৪ বলে সিঙ্গেল নিয়েছেন মাত্র ৪টি।

অন্যদিকে, জিম্বাবুয়ের দুই সেঞ্চুরিয়ান বাউন্ডারি যেমন পেয়েছেন, স্টাইক রোটেটও করেছেন দারুণ। এক রানকে দুই রান বানিয়ে রান তুলেছেন অনায়েসে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে, তাদের ভয়ডরহীন ক্রিকেট। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ফিল্ডিং, বোলিং আক্রমণ দেখে মনে হয়নি জয়ের ক্ষুধা, জেদ আছে। অপরদিকে জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়রা জয়ের ক্ষুধায় মগ্ন ছিলেন গোটা সময়। তারা হারতে পারে এমন ক্রিকেটই খেলেননি। বরং প্রতি আক্রমণে বাংলাদেশকে ভয় দেখিয়ে মনোবল নষ্ট করেছে বারবার।

৮ চার ও ৪ ছক্কায় রাজা ১১৭ রান করেছেন ১২৭ বলে। উইকেটে থিতু হতে সময় নেওয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্যালকুলেটিভ রিক্স নিয়ে দারুণ ছন্দে থাকা এ ব্যাটসম্যান দলকে গন্তব্যে পৌঁছে দেন। আগের দিন ছক্কা মেরে বুনো উল্লাসে মেতে উঠেন তিনি। আজ ময়োঙ্গার ব্যাট থেকে আসা ছক্কায় জয় নিশ্চিতের পর উইকেটে হাটু মুড়ে বসে দুইহাত উপরে তুলে উল্লাস করেন রাজা।

তবে বাংলাদেশেকে বড় ধাক্কা দিয়েছেন চাকাভা। ৭৫ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ১০২ রানের ইনিংস খেলে অধিনায়ক নিজের কারিশমা দেখিয়েছেন। জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি তুলে নেন এ ব্যাটসম্যান। তাসকিনের করা ৩০তম ওভারে পরপর চারটি চার মেরে চাকাভা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বড় কিছুর জন্যই আজ ২২ গজে নেমেছেন।

রাজার রাজত্ব ও চাকার তাণ্ডবে বাংলাদেশ বধের অসাধারণ ক্যাব্য লিখে ফেলে জিম্বাবুয়ে। তাদের অপেক্ষা এখন বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করা। সুযোগটা নিশ্চয়ই নষ্ট করতে চাইবেন না তারা। বাংলাদেশ এই সিরিজে যেভাবে খেলেছে তাতে খালি হাতে দেশে ফিরলেও আক্ষেপ করার কথা নয়। জয়ের তাড়না, ক্ষুধা না থাকলে ম্যাচ হারা স্বাভাবিক নয় কি?