Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষায়

যেন সেতু নয়, একটি স্বপ্নের সিঁড়ি। যার প্রতিটি ধাপে ধাপে জুড়ে আছে কোটি মানুষের স্বপ্ন। আর মাত্র ১১ দিন। এরপরই স্বপ্নজয়। গতির চাকায় মিলে যাবে এপার-ওপার। দুপারের সুখ-দুঃখ একাকার হয়ে যাবে। ২৫ জুন উন্মুক্ত হবে প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পরদিন ২৬ জুন ভোর ছয়টা থেকে যানবাহনের জন্য খুলে দেয়া হবে এই সেতু। ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের প্রায় প্রতি ধাপেই এসেছে চ্যালেঞ্জ। ২০১৪ সালে প্রাথমিকভাবে শুরু হয় নির্মাণকাজ। এরপর নদী শাসন, খনন, পাইলিং, পিলার ও স্প্যান বসানোর কাজ হয়েছে। তিল তিল করে গড়ে ওঠা স্বপ্নের সেতু এখন স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষায়।

চল্লিশ তলার সমান পাইলিং, ১০ হাজার টনের বেশি ধারণ ক্ষমতার বেয়ারিং আর নদী শাসনে এ মেগা স্ট্রাকচার গড়েছে তিনটি বিশ্ব রেকর্ড। খরস্রোতার দিক দিয়ে আফ্রিকার আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। পানি প্রবাহের দিক থেকেও বিশ্বে শীর্ষে। অন্যদিকে একেকটি পিলারের নিচের মাটি ছিল একেক রকম। শেষ পর্যন্ত ১২০ থেকে ১২৮ মিটার পাইলিং করতে হয়েছে। পিলারের ওপর ১০ হাজার ৫০০ টন সহনশীল বেয়ারিং বসানো হয়েছে- যা বিশ্ব রেকর্ড। আবার রেকর্ড পরিমাণ নদী শাসন করেই বাগে আনতে হয়েছে পদ্মাকে। তেমন একটি নদীকে বশে এনে নিজের টাকায় এমন ইমারত! উদ্?যাপনের চেয়ে বড় উপলক্ষ কি-ই বা হতে পারে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটি দেশের? সেই উৎসবের প্রস্তুতি এখন পদ্মার দুই পাড়ে। আগামী ২৫ জুন মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরায় হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রথমে মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশ। এরপর ফলক উন্মোচন করবেন ও উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ওপারে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা পার হতে সময় লাগবে মাত্র ছয় মিনিট। মাদারীপুরের শিবচরে জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি।

এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর স্ট্রিট লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সাতদিনে পর্যায়ক্রমে ৪১৫টি লাইট জ্বালানো হয়। সেতু উদ্বোধনের দুই সপ্তাহ আগেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় স্বস্তিতে কর্তৃপক্ষ। তবে চোখ ধাঁধানো পদ্মা সেতুর আর্কিটেকচারাল লাইটিং স্থাপন হবে উদ্বোধনের পর। সড়কপথের লাইটিং রাতের বেলায় সেতুকে দিনের মতো আলোকিত রাখবে। গত ৪ জুন প্রথম বাতি জ্বলে ২৪টি ল্যাম্প পোস্টে। এরপর প্রতিদিনই বিভিন্ন মডিউলে এবং ভায়াডাক্টে পরীক্ষা চলানো হয় লাইটের। গত শুক্রবার ৬২টি লাইট পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সংযোগসহ পুরো সেতুর লাইটিং কার্যক্রম শেষ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাত ছাড়াও ঘন কুয়াশা বা মেঘলা আকাশে আলো স্বল্পতায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠবে বাতিগুলো।

আমন্ত্রণ পাবেন খালেদা, ইউনূস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট : যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিলেন, এর নির্মাণ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন; স্বপ্নের এই সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। আগামী ২৫ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানাবে সরকার। এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আমন্ত্রণপত্র ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। বিদেশি অতিথিদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আর খালেদা জিয়াকে সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হবে। গতকাল রবিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়া-১ পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ডি- এইচএ