Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকলেও বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে: মির্জা আজিজ

ucb stock regular

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো আমাদের দেশের বর্তমান অর্থনীতির তুলনায় খারাপ হয়নি। তবে বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

শনিবারে (১১ জুন) ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অ্যান্ড এডুকেশন ফোরাম আয়োজিত পোস্ট বাজেট ডায়লগে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, বাজেটে ৭.৫ জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা বাস্তব সম্মত বলে মনে হয় না। এটা অবাস্তব। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও বলেছে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হবে না।

LankaBangla securites single page

বাজেট ৫.৫ ঘাটতি গ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো জরুরি। এর ফলে ঘাটতি বেড়ে ৬ শতাংশ হলেও সমস্যা নেই।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা এ আওতায় আসার কথা না তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ব্যক্তির যোগসাজশে এর আওতাভুক্ত হয়। ফলে যাদের এটা পাওয়া উচিত তারা বঞ্চিত হয়। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্রদের সংখ্যা আরও বেড়েছে। এই তহবিল যেন তছরূপ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বাজেটের আকার জিডিপির অনুপাতে কমে এসেছে। সেটা ১৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এটা ভালো দিক। এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে, সরকারের মধ্যে সচেতনতা এসেছে৷ রাজস্ব আদায়ের হার প্রতি বছরই কমছে। ফলে রাজস্ব আদায় যা ধরা হয়েছে এটাও বাস্তব সম্মত নয়। কারণ, চলতি বছর এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি মার্চ পর্যন্ত আদায় ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের বাকি ২ মাসে বাকিটা আদায় সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ে যে দূরবস্থা সেটা দূর করতে হলে এনবিআরের কর কাঠামো সংস্কার করতে হবে। এনবিআরের করের আওতা প্রসারিত করা দরকার। যারা কর দেয় তাদের করের বোঝা না বাড়িয়ে আওতা বাড়াতে হবে। এতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন হবে। বাজেটে সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু সিমাধান কিভাবে হবে সেটা বলা হয়নি।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, বাজেটের ঘাটতি মেটাতে বড় অঙ্কের টাকা ব্যাংক থেকে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকার এ খাত থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাবে। সবশেষ মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণ যা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটাও অর্জিত হয়নি। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ কম হলে কর্মসংস্থান কমে যাবে। ফলে প্রবৃদ্ধির হারও কমে যাবে। কারণ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির বরাদ্দের টাকা ব্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থবছরের শুরুর দিকে ব্যয় কম হলেও শেষদিকে ব্যয় অনেক বেশি বেড়ে যায়। ফলে কাজের গুণগত মান ভালো হয় না। চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৯ হাজার বছর কোটি টাকার মধ্যে অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মাত্র ৬০ হাজার ৯৯০ কোটি ব্যয় হয়েছে। আগামী দু’এক মাসে সেটা অনেক বেড়ে যাবে।

দেশে গত ৭/৮ বছর ধরে দারিদ্র্য বিমোচনের হার কমে আসছে মন্তব্য করে মির্জ্জা আজিজ বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন কমলেও আয় বৈষম্য ক্রমে বাড়ছে। বর্তমানে সেটা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। মা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। আয় বৈষম্যের পাশাপাশি আঞ্চলিক বৈষম্যও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এটা দূর করতে না পারলে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। যদিও এটা নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী কিছু বলেননি।

বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাচার টাকা দেশের আনার যে সুযোগ দেয়া হয়েছ এতে টাকা পাচার আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে পাচার প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে। আগে কেউ বাইরে টাকা পাচার করার আগে চিন্তা ভাবনা করতো। কিন্তু এখন মনে করবে, টাকা তো ইচ্ছে করলেই ফেরত আনা যাবে। এতে দুর্নীতিবাজদের উৎসাহ দেয়া হলো। আর সৎ করদাতাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। অনেকেই বলে আমার সময়ে প্রথম এই সুযোগ দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু এটা ভুল। আমি সৎ ভাবে উপার্জিত অপ্রদর্শিত আয়ের ক্ষেত্রে এই সুযোগ দিয়েছিলাম। তবে সেখানে শর্ত ছিল, যে টাকা বৈধ করা হবে তার পুরো করসহ আরও ১০ শতাংশ অতিরিক্ত কর দিতে হবে।

রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি রপ্তানি বেড়েছে কিন্তু আমদানির পরিমাণ তার থেকেও বেশি। ফলে রিজার্ভের মাত্রা কমে ৪২ বিলিয়ন হয়েছে। এক বছর আগে যা ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার। ফলে মুদ্রার উপর চাপ পড়ছে। অবমুল্যায়ন হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার ব্যবস্থার উপর ডলার দর ছেড়ে দিয়েছে। ফলে মুদ্রার আরও অবমুল্যায়ন হবে। এতে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। ফলে বাজেটের ৫.৬ মূল্যস্ফীতি কিভাবে হবে সেটা বোধগম্য নয়।

আইপিডিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। নতুন বাজেট ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। ৫৬৩ গুণ বাজেটের আকার বেড়েছে। খুব চ্যালেঞ্জিং সময়ে এই বাজেট দেয়া হলো। করোনা পরবর্তী ব্যবসা ঘুরে দাড়াতে শুরু করলেও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধর প্রভাব সারা বিশ্বে পড়েছে। সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি চড়া, এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। তবে শ্রীলঙ্কা বা অন্য দেশের মতো খারাপ অবস্থা আমাদের হবে না। বিশ্বের শীর্ষ নেতারা বসে বিশ্ব পরিস্থিতির সমাধান না করলে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

কর নিয়ে তিনি বলেন, করপোরেট কর কমলেও ব্যক্তি আয়কর সীমা কমানো হয়নি। নিম্ন মধ্যবিত্তদের করের বোঝা কমাতে আয়কর সীমা বাড়ানো দরকার ছিল।

এই বাজেটকে ব্যবসাবান্ধব বাজেট বলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু সরকারের লক্ষ্য প্রান্তিক জনগণের জন্য কাজ করা। কোভিড অনেকে কাজ হারিয়েছে। এজন্য কর্মসংস্থান আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন আইপিডির শীর্ষ এই কর্মকর্তা।

অর্থসূচক/এইচডি/এএইচআর