Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হাতিকে বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান

বিশ্ব হাতি দিবস আজ (১২ আগস্ট)।  ২০১২ সাল থেকে আজকের এই দিনে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। ২০১২ সালে কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা প্যাট্রিসিয়া সিমস ও মাইকেল ক্লার্ক এবং থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট রিইন্ট্রোডাকশন ফাউন্ডেশনের প্রধান শিভাপর্ন দারদারানন্দ বিশ্ব হাতি দিবস প্রতিষ্ঠা করেন।

হাতিরা তৃণভূমিতে বসবাস করে। হাতি প্রায় সবদেশে পাওয়া যায়। বেশি পাওয়া যায় আফ্রিকার দেশগুলোতে। তবে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপালে ভারতীয় হাতি পাওয়া যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, তানজানিয়া, জাম্বিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিকে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে হাতির বিচরণভূমি অক্ষুণ্ণ রেখে আইনত নিরাপত্তার বিধি থাকার পরও চোরাকারবারিরা হাতির দাঁত, মাংস কিংবা তাদের ছোট বাচ্চাদের ধরার জন্য অবৈধ শিকারে লিপ্ত। এসব ছোট ছোট বাচ্চা হাতিকে মেরে পিটিয়ে পোষ মানিয়ে বিভিন্ন খেলা, সার্কাস কিংবা মন্দিরে বা পর্যটকদের আকর্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয়।

প্রকৃতির বন্ধু হাতি এখন বিপন্নপ্রায় প্রাণীর তালিকায় পড়ে গেছে। এর কারণ তার সামনের দুটো দাঁত। মহার্ঘ এই দাঁতের কারণে আন্তর্জাতিক চোরাচালানি চক্রের হাতে প্রতি বছর এখন প্রায় ৩০ হাজার হাতি মরা পড়ে। হাতিরা হচ্ছে যূথবদ্ধ এবং পরিবারকেন্দ্রিক প্রাণী। এদের একটি সদস্যের মৃত্যু তার পরিবারের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনে।

গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, আধুনিক অস্ত্র বা বন্দুক আবিষ্কারের আগে ধারণা করা হয় আফ্রিকায় কমপক্ষে এক কোটি হাতি ছিল। কিন্তু এখন সেখানে বড়জোর ৫ লাখ হাতি আছে। এই হিসাবে ইতোমধ্যেই বনভূমি এবং সাভানা অঞ্চল থেকে ৯৫ শতাংশ হাতি বা কর্মক্ষম প্রাণী হারিয়ে গেছে। এজন্য যেসব দেশে হাতি আছে তারা বিশ্বব্যাপী হাতি নিধন বা হাতির দাঁতের ব্যবসা রহিত করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কারণ হাতি থাক বা না থাক যদি কোনো দেশে তার দাঁতের ব্যবসা থাকে তাহলে হাতি বিপন্ন হবে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হাতির অবদান উল্লেখ করার মতো। বনাঞ্চলে চালাচলের সময় আস্ত বিচিশুদ্ধ ফলই গিলে ফেলে হাতি। এরপর যে গাছের ফল তারা খেয়েছিল সেখান থেকে অনেক দূরে গিয়ে বিচিটি তার বিষ্ঠার সঙ্গে ফেলে দেয় এবং সেই সঙ্গে তার বিষ্ঠাও যুক্ত হয় গাছের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ সার হিসেবে। গবেষণায় দেখা যায়, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনের ৭৫ থেকে ৯৫ শতাংশ গাছের বীজই ছড়িয়ে পড়ে পশুপাখির সাহায্যে, বাতাস বা পানির সাহায্যে নয়। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হাতি এতে প্রধান অবদান রাখে।

এছাড়াও বনাঞ্চল তা গড়ে তোলায় হাতিরা বিরাট অবদান রাখে। তার আকৃতি, আকার, ক্ষুধা, খাবারের পরিমাণ এবং পরিযায়ী অভ্যাস নিয়ে অন্য যে কোনো প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশি বীজ ছড়ায়। পাখি বা অন্য ছোট প্রাণী মূলত ডুমুর জাতীয় ফল বা বৃক্ষের বীজই ছড়াতে পারে। কিন্তু আম বা অন্য যেসব বড় বীজের বৃক্ষ আছে তা ছড়াতে প্রয়োজন বানর, শিম্পাঞ্জী বা হাতি জাতীয় বৃহৎ প্রাণীর। হাতির বিষ্ঠাও সার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। হিসাব করে দেখা গেছে, একটি পূর্ণ বয়স্ক হাতি এক সপ্তাহে প্রায় এক টন প্রথম শ্রেণির জৈব সার উৎপাদন করে। বীজের অঙ্কুরোদ্গম এবং অঙ্কুর বাঁচিয়ে রাখতে এ বিষ্ঠা চমৎকার অবদান রাখে। এজন্যই পরিবেশবিদরা হাতিকে বনের মেগা-গার্ডেনার হিসেবে অভিহিত করেন। তাই পরিবেশ ও জলবায়ু এবং জীববৈচিত্র্যের রক্ষা করার জন্য হাতির বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। তাই হাতি রক্ষায় প্রয়োজন নিরাপদ অভয়ারণ্য গড়ে তোলা।

হাতির জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বন অধিদপ্তরের সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক ড. মরিয়ম আক্তার রাইজিংবিডিকে বলেন, হাতি আমাদের দেশে এখন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। হাতির জন্য আমাদের বনাঞ্চলে পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকায় তারা লোকালয় এসে কৃষি জমি নষ্ট করছে। এর থেকে রক্ষা পেতে হলে হাতি বসবাসের উপযোগী বনায়ন তৈরি করতে হবে। কারণ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হাতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।