Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

জমে উঠেছে কটিয়াদির ঢাকের হাট

ঢাকি আছেন, আছেন বায়নাকারী আর শারদ বাতাসে আছে উৎসবের হাওয়া। বাদ্যযন্ত্রের সম্মিলিত মুর্ছনার সঙ্গে শত শত মানুষের পদচারণায় জমে উঠেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির ঐতিহ্যবাহী ‘ঢাকের হাট’।

মহাষষ্ঠী পূজোর মধ্য দিয়ে শনিবার (১ অক্টোবর) শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর সেখানে ঢাকের আওয়াজ ছাড়া পূজোর আনন্দই হবে না। সেই আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে ঢাকের আওয়াজ। ঢাক ভাড়া নিয়ে পূজোর পাঁচটি দিন পূজা মণ্ডপগুলো থাকবে উচ্ছ্বসিত।

এবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাদকরা তাদের বাদ্য যন্ত্রের পসড়া নিয়ে হাটে এসেছেন। নাচের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বাদ্য বাজিয়ে চলছে বায়না নিতে আসা পূজা আয়োজকদের মনজয় করার চেষ্টা। ঢাক-ঢোলের হাটটি শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার মহাষষ্ঠী পূজোর দিন গভীর রাত পর্যন্ত চলবে।

ঐতিহ্যকে লালন করে প্রতি বছরই জাকজমক থাকে কিশোরগঞ্জের ঢাকের হাট। জেলার কটিয়াদি উপজেলা সদরে এমন হাটের আয়োজন চলছে কয়েকশত বছর ধরে। এই হাটে বাদ‌্যযন্ত্র বিক্রি হয় না। পূজার পাঁচটি দিন ধর্মীয় রীতি রেওয়াজের জন‌্য বাদকসহ বাদ‌্যযন্ত্র ভাড়া দেওয়া হয়।  

কটিয়াদীর পুরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতন এবারও ঢাকীদের সরব উপস্থিতি। ঢাকার বিক্রমপুর, নারায়নগঞ্জ, সিলেট, নরসিংদী, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইলসহ কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার থেকে আসা ঢাকীর সংখ্যাই বেশি। বেশিরভাগ ঢাকিরা বংশ পরম্পরায় প্রতিবছরই এ হাটে ঢাক-ঢোল নিয়ে উপস্থিত হন। শুধু ঢাক-ঢোলই নয়, এখানে বাঁশি, সানাই, করতাল, খঞ্জনি, মন্দিরা, কাঁশি, ঝনঝনিসহ নানা জাতের বাদ্যযন্ত্রও বায়না করা হয়। সাধারণত ছোট-বড় দলের ঢাকীরা দলীয় বা এককভাবে কাজ করে থাকন। ১৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়।

সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে সন্দিপ কুমার দাস সাতজনের একটি ঢাকের দল নিয়ে এসেছেন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনা প্রভাবে গত কয়েক বছর পূজা কম ছিল, চুক্তি নিয়েও ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তবে এবছর পূজা বেড়েছে। তাই দল বেঁধে পূজোর পাঁচদিন মণ্ডপে  গান বাঁজনা করতে এ হাটে এসেছি। যাদের সঙ্গে দরদামে মিলবে তাদের মণ্ডপেই বাজনা বাজাবো। এবছর আমরা ৭০-৮০ হাজার টাকা পেলেই পূজা মণ্ডপে ঢাক বাজাবো। 

নারায়নগঞ্জ থেকে এসেছেন কৃষ্ণ মনিদাস। তিনি ১০ জনের দল নিয়ে এসেছেন। প্রায় ২৫ বছর ধরে এ হাটে আসেন। পূজার সময় এখান থেকে ভালো বায়নায় দল নিয়ে যাওয়া যায়। তিনি বলেন,  ‘ঢাকিদের মিলনমেলায় অংশীদার হতে চলে আসি। ঢাকের হাটটি আমাদের কাছে একটি আকর্ষণের নাম। আশা করছি এবছরও ভালো দামে কোন পূজায় অংশ নিতে পারবো। আমরা ১ লাখ টাকায় পূজার পাঁচদিন বাজনা বাজাতে চাই।’

গাজীপুর থেকে ঢাকের বায়না করতে আসা সজল দে রাইজিংবিডিকে বলেন, কটিয়াদীর ঢাকের হাটে প্রতিবছরই আসি। ভালো ঢাকিদের একমাত্র এ হাটেই পাওয়া যায়। গতবছর তিনজনের একটি দল নিয়েছিলাম। তবে এবছর একটু বড় দল নেব। টাকা পয়সা কোনো সমস্যা নয়, দল ভালো চাই। কিন্তু এবছর প্রচুর ঢাকির দল এসেছেন এবং সবাই বেশ ভালো বাজাচ্ছে। তাই ঘুরে ঘুরে দেখছি কথা বলছি সব ঠিকঠাক থাকলে চুক্তি করবো।’

হাটের আয়োজক ও কটিয়াদী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শেখর সাহা বলেন, ঢাকের হাটে চার থেকে পাঁচ শতাধিক বাদকদল আসে। গত বছর করোনা প্রভাবে উপস্থিতি কম ছিল। এবছর সারাদেশে পূজা বেড়ে যাওয়ায় আবার আগের মতো অনেক বাদকদল হাজির হয়েছে। সাধারণত দক্ষ দলগুলোই এ হাটে আসে। আশা করছি, সবাই বিভিন্ন জায়গায় চুক্তি করবে। তবে যারা চুক্তিবদ্ধ হতে পারে না তাদের আমরা টাকা পয়সা দিয়ে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। 

জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দির প্রথম ভাগে রাজা নবরঙ্গ রায়ের আমলে কটিয়াদীতে প্রথম ঢাকের হাটের সূচনা হয়। তিনি ওই সময় রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। একবার তিনি পূজার প্রয়োজনে সেরা ঢাকির সন্ধানে বিক্রমপুর পরগনায় বার্তা পাঠান। তখন নৌপথে বহু ঢাকি কটিয়াদীতে আসেন। রাজা নিজে বাজনা শুনে সেরা দলটি বেছে নেন। সেই থেকেই প্রচলন শুরু এ ঢাকের হাটের।