Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

‘কোন জাদুর কাঠি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে, সে পথ দেখাননি অর্থমন্ত্রী’

ucb stock regular

উচ্চ মূল্যস্ফীতির বর্তমান এই সময়ে প্রয়োজন ছিল মানুষকে স্বস্তি দেওয়া, কিন্তু বাজেটে সে বিষয়ক দিক নির্দেশনা নেই বলে মন্তব্য করেছে সিপিডি।
তাদের মতে, মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা যখন বড় ধরনের চাপের মুখে আছে, তখন এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমানো হলো। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার কথা মুখে বললেও কোন জাদুর কাঠি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে, সে পথ দেখাননি অর্থমন্ত্রী।

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করতে গিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এসব কথা বলেছে। শুক্রবার (১০ জুন) রাজধানীর লেক শোর হোটেলে এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে তারা।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বাজেট বিশ্লেষণ নিয়ে উপস্থাপনা দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে এর মিল নেই। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে দাম, তার সঙ্গে সরকারের তথ্যের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী হয়তো ভাবছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা মহামারিসহ বর্তমান সংকট দ্রুত কেটে যাবে। কিন্তু কোন জাদুর কাঠি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে, সে পথ দেখাননি অর্থমন্ত্রী।

LankaBangla securites single page

তিনি বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে সামাজিক নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক মহামারির সময়েও তা দেখা গেছে। কিন্তু এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে দেখা গেল, পেনশন ব্যতীত সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ৩ হাজার কোটি টাকা কমেছে। জিডিপির অনুপাতে তা আগের অর্থ বছরের ২ দশমিক ২২ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে এসেছে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতির সময় যেখানে উন্মুক্ত বিক্রয় অত্যন্ত জরুরি, সেখানে এ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে ছয়টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন; অনেক অঙ্গীকার করেছেন, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা গেল না। তাঁর মত, বাজেটে সৃজনশীলতার পাশাপাশি সংবেদনশীলতার অভাব আছে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এক সময় দেশে সর্বোচ্চ কর হার ছিল ৩০ শতাংশ, কোভিডের সময় তা কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এখন পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হওয়ায় উচিত ছিল, এই হার আবার ৩০ শতাংশে উন্নীত করা। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তা করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, যাদের আয় বেশি কোভিডের সময় তাঁরা আরও বেশি আয় করেছেন; আর যাদের আয় কম, তাঁদের আয় আরও কম। অর্থাৎ বৈষম্য বেড়েছে-শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই। সম্পদ কর হারও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অথচ বাজেট দর্শনের মূল দিক হলো, সম্পদের পুনর্বণ্টন। অর্থাৎ কারও আয় বেশি হলেও সম্পদ পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ভারসাম্য আনা, কিন্তু তার কোনো প্রতিফলন বাজেটে নেই।

তিনি বলেন, করমুক্ত আয় সীমা বৃদ্ধি করা না হলেও নিয়মিত বেতনের অতিরিক্ত প্রাপ্য ভাতার করমুক্ত সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে-৫ দশমিক ৫ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ লাখ করা হয়েছে। এরপর বিনিয়োগ কর রেয়াত ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে নিম্ন আয়ের নয়, বরং উচ্চ আয়ের মানুষেরা উপকৃত হবেন বলেই মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, আগামী বছর সাধারণ নির্বাচন। এই সময় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ হ্রাস রাজনৈতিকভাবেও সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। দেশের জনগণও এটাকে ভালোভাবে নিবে না।

এসময় আরো বক্তব্য দেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।