Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

‘বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল নেতা’

পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র নেতা, যিনি প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি না হয়েও যা বলতেন তৎকালীণ পূর্ব বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষ তাই করতেন। একটি রাজনৈতিক দলকে তিলে তিলে গড়ে তুলে সেই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে একটি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।  সেই দেশের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ ।’

শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘নজরুল হামিদ’ মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

১৫ আগস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি।
এনামুল হক শামীম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে অনেকেই মহাত্মা গান্ধী, কায়েদ-ই-আজমসহ বিশ্বের অনেক নেতার সঙ্গে তুলনা করেন। মহাত্মা গান্ধী কিন্তু কংগ্রেস সৃষ্টি করেন নাই। কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। কায়েদ-ই-আজমও মুসলিম লীগ সৃষ্টি করেন নাই। মুসলীম লীগে যোগ দিয়েছিলেন। আর বঙ্গবন্ধু হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল একজন নেতা, যিনি একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তুলে সেই দলের নেতৃত্বে একটি দেশ স্বাধীন করেছিলেন।’

বঙ্গবন্ধুর কাছে মানুষের অধিকার রক্ষায় দেশ স্বাধীন করাই ছিলো লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলেছিলেন আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। আসলে তিনি স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সংগ্রাম করেছিলেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তিনি হতে পারতেনই।  মন্ত্রীত্ব থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য।  কারণ তার লক্ষ্য নির্ধারিত ছিলো। তার লক্ষ্য ছিলো আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে তিলে তিলে গড়ে তুলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে এবং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের বিজয়ী হতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু অগ্নিঝরা সেই ৭ মার্চের ভাষণের আবেদন তুলে ধরে এনামুল হক শামীম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ অনেকেই আব্রহাম লিংকনের গেটিসবার্গের ভাষণের সঙ্গে তুলনা করেন, আরো অনেক ভাষনের তুলনা করেন। আসলে এই ভাষণের সঙ্গে অন্য কোনো ভাষণের তুলনা হয় না।’

তিনি বলেন, ‘একটি জাতিকে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে  মুক্ত করার জন্য স্বাধীন করার জন্য যা কিছু করার দরকার তিনি তাই করেছিলেন।  চিন্তা করেন একটি বাক্য যদি ভুল হতো সেখানে অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারতো।  বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের নামও আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন। তিনি ছাত্রলীগকে দিয়ে আগেই পতাকা উড়িয়েছিলেন সবুজের বুকে লাল। রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সংগীত করার বিষয়ে আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন।’

বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি তার সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদানের কথা স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জেলে, সেই সংকটকালে সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন তিনি (ফজিলাতুন্নেছা মুজিব)। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে কারাগারে দেখা করে তার বার্তা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি।’

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ভারতের তৎকালীণ প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

এনামুল হক শামীম বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিলো..খুনি জিয়া, মোশতাকরা ভেবেছিলো বঙ্গবন্ধুতে হত্যা করে তার নাম মুছে ফেলা যাবে।  পোস্টারের বঙ্গবন্ধুকে ছিড়ে ফেলা যায়, দেওয়ালের বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায়; কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের শেখ মুজিবুর রহমানকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।  কারণ বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন।’

সভায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের আংশিক বিচার হয়েছে।  যারা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে তাদের দেশে এনে বিচার শেষ করতে হবে।  একই সঙ্গে ওই হত্যাকাণ্ডে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে ষড়যন্ত্র ছিলো, তা উন্মেচন করতে তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।  তা না হলে ইতিহাসের এই অপূর্ন অধ্যায়ের জন্য রাজনীতিবিদদের ভবিষ্যতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করার লক্ষ্য ধারণ করেছিলেন এবং একটি স্বাধীন জাতি আমাদের উপহার দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজের রক্ত দিয়েছেন এই দেশের জন্য। বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু থেকে এবং বঙ্গবন্ধু থেকে বাংলাদেশকে কখনো আলাদা করা যাবে না।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পেরেছে, কিন্তু দেশের মানুষের হৃদয় থেকে তার নাম মুছে ফেলতে পারে নি।  এটা কখনো সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিলো, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আজ বিচার হয়েছে। এর মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মুখচ্ছবি, তিনি চিরঞ্জিব। যারা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে, তারাই ইতিহাস থেকে মুছে গেছে।’ 

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব। এ সময় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কামাল মোশারেফ, ক্রীড়া সম্পাদক মাকসুদা লিসা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নাদিয়া শারমীন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান, কল্যান সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য হাসান জাবেদ, এসকে রেজা পারভেজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।