Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

ডলার সংকট নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন

বিশ্ব বাণিজ্যে লেনদেনের প্রধান মুদ্রা মার্কিন ডলার। গেল কয়েক মাস ধরে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে মুদ্রাটির দাম এখন ৯৪ টাকা ৬৮ পয়সা, যা ডলারের দামের উচ্চ রেকর্ড। অথচ যা ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। অর্থাৎ গত বছরের দাম থেকে যা এখন প্রায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে খোলাবাজারে সে দাম উঠছে ১১৯ থেকে ১২০ টাকায়, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত দাম থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি। ডলারের দাম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের ৩ আগস্ট থেকে দুই-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ছাড়ায়। যা পরবর্তীতে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে কেনাবেচা হয়েছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায়। এভাবে দাম বাড়তে বাড়তে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে তার দাম এখন প্রায় ৯৪ টাকা ৬৮ পয়সা। খোলাবাজারে এ দাম উঠছে প্রায় ১১৯ থেকে ১২০ টাকা। জানা যায়, বাজার ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দেড় মাসের কম সময়ে ১৬০ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিক্রি করে। গত বছরও বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে প্রায় ৭৬২ কোটি ১৭ লাগ ডলার। এরপরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না ডলারের দাম।
সংকট শুরু হয় গত বছরের মাঝামাঝি থেকে। করোনা সংকট কেটে ওঠার পর যখন বিশ্ব অর্থনীতি সচল হয়, তখন আমদানিনির্ভর দেশগুলোর আমদানি বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা! এতে বিশ্বে জ্বালানিসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। যার প্রভাবে আমাদের দেশেরও আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। চাপে পড়ে রিজার্ভ। ফলে তৈরি হয় ডলার সংকট। বিশেষজ্ঞদের মতে, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বৃদ্ধি পাওয়া, অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসপণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ না থাকা, আমদানি বিকল্প সৃষ্টিতে যথাযথ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা, বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় এবং অপ্রয়োজনীয় সফরের লাগাম টেনে না ধরা এবং অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বন্ধে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় বৈদেশিক মুদ্রায় চাপ তৈরি হয়। ফলে ডলারের সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। সাধারণত, যখন কোনো জিনিস চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বা জোগান কম থাকে তখন তার দাম বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও বিপরীতে চাহিদার সমপরিমাণ সরবরাহ বা জোগান না থাকায় ওই জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায়। ঠিক তেমনি আমদানি ব্যয় বাড়ার ফলে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু বিপরীতে চাহিদা আলোকে সরবরাহ বা জোগান না থাকায় এর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যায়। আর সামনে ডলারের দাম আরো বেড়ে যাবে এমন আশায় কিছু অতি মুনাফালোভী ডলারের মজুত করে রাখছে এবং অনেকে লাভের আশায় ডলারে বিনিয়োগ করছে। ফলে এক প্রকার কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। যার ফলে ডলারের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে। এতে আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ যে কতটা আর্থিক সংকটপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে তা সহজে অনুমেয়।
সর্বোপরি, বৈদেশিক মুদ্রা বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনের প্রধান মাধ্যম। এর সংকট মানে আমাদের অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে অস্থিরতা বিরাজ করা। এর প্রভাব পড়ে সাধারণ জনগণের ওপর। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের সংকট নিরসনে সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল দ্রব্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা, অপ্রয়োজনীয় সফর বন্ধ করা, বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ানো, অতি মুনাফালোভী ডলার মজুতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং রপ্তানি বৃদ্ধিসহ আমদানিকৃত পণ্য দেশে স্থায়ী উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে যে কোনো অবস্থাতেই হোক ডলার সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় আর্থিক নীতি প্রণয়নসহ সব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

শহিদুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।
[email protected]