Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

একাধিক সম্পর্কের প্রতিবাদই কাল হলো নারী চিকিৎসকের

রাজধানীর কলাবাগানের একটি আবাসিক হোটেলে খুন হওয়া নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাইম সিদ্দিকার প্রেমিক রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে আরও একাধিক নারীর সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জান্নাতুল জেনে যাওয়ার পর তাদের সম্পর্কে কলহ দেখা দেয়। প্রায় ঝগড়া হতো তাদের মধ্যে। জান্নাতুল চেষ্টা করতেন আলাপচারিতায় বিষয়টি সমাধান করার। এরই জের ধরে জন্মদিন পালনের কথা বলে কলাবাগানের ওই আবাসিক হোটেলে নিয়ে খুন করা হয় জান্নাতুলকে।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে র‌্যাব।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এতে তিনি বলেন, গত বুধবার রাতে রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামক আবাসিক হোটেল থেকে একজন নারী চিকিৎসকের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এ সময় আঘাত ও জখমের চিহ্ন দেখা যায়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে র‌্যাব হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব- ২ এবং র‌্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর এলাকা মামলার একমাত্র আসামি রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডের সময় আসামির পরিহিত রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল।

গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল করিম রেজা

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত রেজা ভিকটিমকে হত্যার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে জানায়, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের সঙ্গে তার পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ২০২০ সালের অক্টোবরে বিয়ে করে তারা। পরিবারের অগোচরে বিয়ে হওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেছেন। ভিকটিমের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীন গ্রেপ্তারকৃতের একাধিক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। বিষয়টি ভিকটিম জানতে পারলে বিভিন্ন সময়ে কাউন্সেলিং বা আলাপচারিতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এই নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডাও সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে গ্রেপ্তারকৃত তার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ভিকটিমকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে হত্যার জন্য তার ব্যাগে ধারালো চাকু নিয়ে যান তিনি।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বুধবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া রেজা ভিকটিমকে তার জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্টে’ নামে একটি আবাসিক হোটেল নিয়ে যায়। ঐ অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থানকালে ভিকটিমের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতের বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা কাটাকাটি, বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় রেজাউল তার ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার পর সে গোসল করে নেন, যাতে হত্যার কোনো আলামত তার শরীরে প্রদর্শিত না হয়। এ সময়, ভিকটিমের মোবাইল ফোনও সঙ্গে নেন তিনি। যাওয়ার সময় দরজার বাইরে থেকে রুমের তালা বন্ধ করে দেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে রেজা আরও জানিয়েছেন, হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে মালিবাগের বাসায় যান তিনি। বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে তার নিজের হাতের ক্ষতস্থান সেলাই করেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরবর্তীতে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে আত্মগোপন করে। সেখান থেকে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হন তিনি।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করে। এমবিএ চলাকালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ইতোমধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ২০২২ সালে জুন মাসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করেন তিনি।

গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানায় র‌্যাব।

ডি- এইচএ