Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

গোল পাতার গুড় যাচ্ছে বিদেশে, অর্থনীতির মোড় ঘুরে যাচ্ছে এই গ্রামটির

গোল পাতার গুড় যাচ্ছে বিদেশে, অর্থনীতির মোড় ঘুরে যাচ্ছে এই গ্রামটির

গোল পাতার গুড় যাচ্ছে বিদেশে, অর্থনীতির মোড় ঘুরে যাচ্ছে এই গ্রামটির

এমটি নিউজ২৪ ডেস্ক : শীত মৌসুমের শুরুতেই গোল গাছিদের কর্মযজ্ঞে বদলে যায় বেহেলা নামের গ্রামটির চিত্র। ভোর থেকে সংগ্রহ চলে গোল পাতার রস। পরে শুরু হয় গুড় তৈরির কর্মযজ্ঞ।

শীত মৌসুমের ৪ মাস কর্মসংস্থান হয় প্রায় ২ হাজার গাছির ও তাদের স্ত্রীদের। এতেই জীবিকা চলছে এসব মানুষের। বরগুনা জেলার তালতলীর বেহেলা গ্রামের এই গোল রসের গুড় এখন সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে।

এতে গ্রামীণ অর্থনীতির মোড় ঘুরে যাচ্ছে এই গ্রামটির। তবে গাছিরা চাচ্ছেন মানসম্মত প্রশিক্ষণ ও গুড় সরকারিভাবে বাজারজাতকরণ করার সহযোগিতা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে গোল গাছের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এসব গোল গাছের বাহর থেকে সংগৃহীত রস জ্বালিয়ে প্রতি শীতে প্রায় ১০ হাজার টনেরও বেশি গুড় উৎপাদিত হয়।

সবচেয়ে বেশি গাছ আছে বেহেলা গ্রামে। গ্রামটিতে গোল গাছের সংখ্যা ১৫ হাজার। এরপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাছ রয়েছে গেন্ডামারা গ্রামে। এটিসহ উপজেলার অন্যান্য কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে রয়েছে হাজার পাঁচেক গাছ।

স্থানীয়ভাবে গোলের বাগানকে বলা হয় ‘বাহর’। বেহেলার গোল বাহরে কাজ করে প্রায় ৫০০টি গোল চাষি। এই গ্রামে গোলের বাহর রয়েছে ২ হাজার প্রায়। শীতে এসব গাছ হয়ে ওঠে গাছিদের কর্মসংস্থানের উৎস। একজন গাছি প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০টি গাছের রস আহরণ করতে পারেন। বর্তমানে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন অন্তত তিনশ চাষি।

গোলের বাহর (বাগান) রয়েছে চার হাজার প্রায়। শীতে এসব গাছ হয়ে ওঠে গাছিদের কর্মসংস্থানের উৎস। একজন গাছি প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ গোল গাছের রস আহরণ করতে পারেন। বর্তমানে রস সংগ্রহে এই গ্রামটিতে ৩০০ জন গাছির ব্যস্ত সময় কাটছে।

বাকিরা কেউ কেউ নিজের গোল গাছগুলো অন্য মানুষ দিয়ে কেটে সমান-সমান গোল রস নিবে এমন চুক্তিতে। প্রতি মৌসুমে গোল গাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই মৌসুম জুড়ে রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত থাকেন। গোলের গাছের যেমন গুড় তৈরি হয় তেমনি এই গুড় তৈরির কাজে গাছের পরিত্যক্ত ডেগা ব্যবহার হয় জ্বালানী হিসেবে। এছাড়াও গোল পাতাও বিক্রি করা হয়। সব মিলিয়ে একটি গোল গাছ থেকে তিন ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, শীত মৌসুমকে সামনে রেখে গাছিরা নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ সময় পর্যন্ত গোল গাছগুলো কেটে রস সংগ্রহের উপযোগী থাকে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গোল গাছের রস ঝরা শুরু হলে তারা খরচা কমানোর জন্য প্লাস্টিকের পাত্র বসিয়ে সেই রস সংগ্রহ করেন। 

শীত যত তীব্র হয় এই রসের চাহিদাও তত বেড়ে যায়। শীতকালীন এ কয়েক মাসে গোল রস ও গুড় বিক্রি করে লাখ টাকাও আয় করেন তারা। গোলোর এ রস প্রতি কলস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ও গুড় প্রতি কেজি ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এক কলস রস দিয়ে ৩ কেজি গুড় তৈরি হয়। এজন্যই এক কলস রস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি করা হয়।

এদিকে এই গ্রামের গোলের গুড় চলে যায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। সেখানেও এর চাহিদা রয়েছে অনেক। তবে গাছিরা চাচ্ছে সরকারিভাবে তাদের গোলের গুড়গুলো বিদেশে গেলে আরও ভালো দাম পাবে। 

পাশাপাশি যারা এখনো ভালোভাবে রস সংগ্রহ করতে পারে না তাদের ভালো করে প্রশিক্ষণ দেওয়ারও দাবি করেন এসব গাছি। তাহলেই গ্রামটি হবে অর্থনীতির মডেল।

তালতলীর বেহেলা গ্রামের দীলিপ কুমার হাওলাদার বলেন, এ মৌসুমের শুরুতে গোলের গাছ গুলো কাটার উপযোগী করি। আমার ৩০০ গাছ আছে এগুলো নিজেই কেটে রস সংগ্রহ করে তারপর গুড় তৈরি করে গ্রামে বিক্রি করি আছে। 

আমি পরিষ্কার পরিছন্ন ভাবে গুড় তৈরি করাতে শীতকালীন এ সময়ে প্রচুর অর্ডার পাই। প্রতি কলস রস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গুড় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে। আমার যে ৩০০ গাছ থেকে প্রায় ৮ কলস রস হয় এতে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার টাকার গুড় আসে। পুরো শীতকালীন মৌসুমে তিন থেকে চার লাখ টাকার গুড় বিক্রি হবে বলেও তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, এই গোল গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য ঘের কেটে ভাটা-জোয়ারের লবণ পানি রাখা হয়। একই গ্রামের মহিলা গাছি চামেলি বলেন, এই মৌসুমে যে গোলের রস পাই তাতে ধান চাষের চেয়ে গোলের রস ও গুড়ে আয় বেশি। 

৩৩ শতাশং জমিতে যে পরিমাণ ধান চাষ হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয় গোলের গুড়ে। এজন্য আমরা ধান চাষ রেখে গোল চাষে আগ্রহী হয়েছি। এতে করের আমাদের পরিবারের অর্থনীতির অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গোল গাছের রস যেমন পাই তেমনি গোল পাতাও বিক্রি করা যায়। আর গোলের পরিত্যক্ত ঠগা জ্বালানি হিসেবেও বিক্রি করা হয়। 

সব মিলিয়ে গোলের চাষে আমার লাভ বেশি হয়। তবে যাদের গাছ আছে তারা রস সংগ্রহ না করে বসিয়ে রাখছে তাদের ভালো প্রশিক্ষণ দিলে এই গ্রামটি থেকে অনেক গোলের গুড় সংগ্রহ করা যাবে।

প্রতিবন্ধী চাষি লাল চন্দ্র বলেন, আমাদের এলাকার গোলের গুড় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাঠানো হয়; আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের সুবাদে কিছু বিক্রি করা হয়। তবে সরকারিভাবে যদি বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আরও লাভবান হতে পারতাম।

তালতলী কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, আমাদের কাছে গোল গাছের যে তথ্য আছে এটা আনুমানিক। গোল গাছ নিয়ে কৃষি বিভাগের কোনো কাজ নেই। 

আমরা মাঠ কৃষকদের নিয়ে কাজ করে থাকি। তবে এই গোলের গুড়ের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গোলপাতাকে গবেষণার মাধ্যমে গোল গাছ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে এটা খুব কাজে লাগবে।

তিনি আরও বলেন, ভালোভাবে গুড় তৈরি করে প্যাকেজিং করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও যাবে। এজন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া খুব জরুরি। এ বিষয়ে আমার দপ্তর থেকে খুব দ্রুত প্রস্তাব পাঠানো হবে কৃষি মন্ত্রণালয়ে।