Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

হবিগঞ্জে শত শত মে. টন সার ব্যবসায়ীদের গুদামে

হবিগঞ্জে এখনও পুরোদমে রোপা আমনের আবাদ শুরু না হওয়ায় সার কিনতে শুরু করেননি কৃষকরা। তবুও গেল মাসে জেলায় আড়াই হাজার মেট্রিক টনের বেশি সার মজুদ করা হয়েছে। বাজারে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে কিছু ব্যবসায়ী এ সার মজুদ করে রেখেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

বন্যার কারণে এবার জেলায় রোপা আমনের আবাদ পিছিয়েছে অন্তত ১২ দিন। কিছু এলাকায় বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হলেও এখনও আবাদ শুরু না হওয়ায় কৃষকরা সার কেনেননি। তবে ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ছয় টাকা বেড়ে যাওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী সার মজুদে তৎপর হয়ে উঠেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গেল জুলাই মাসে হবিগঞ্জে তিন ধরনের সারের চাহিদা দেখানো হয়েছে তিন হাজার ৭৪ মেট্রিক টন। এখানে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) ৮৮ জন ডিলার দুই হাজার ৬৪৯ মেট্রিক টন উত্তোলন করে দুই হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ইউরিয়া সারের চাহিদা দেখানো হয়েছিল এক হাজার ৪৬১ মেট্রিক টন। উত্তোলন করা হয়েছে এক হাজার ২৯৫ এবং বিক্রি হয়েছে এক হাজার ২৩৯ মেট্রিক টন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাত্র রোপা আমনের বীজতলা করছেন কৃষকরা। সার লাগবে আরও কয়েকদিন পর। তাই বেশির ভাগ কৃষক এখনও সার কিনতে শুরু করেননি। অথচ এরই মধ্যে দুই হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন সার বিক্রি হয়ে গেছে! তাহলে এ সার এখন কার গুদামে রয়েছে- এমন প্রশ্ন সচেতন কৃষকদের।

ওয়ারিশ মিয়া, সামছুল আলম, ফারদুল মিয়া, আনোয়ার হোসেন ও তৌফিক মিয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয় এ ব্যাপারে। ওয়ারিশ মিয়া বলেন, পুরোদমে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হবে আরও অন্তত দেড় সপ্তাহ পর। তবে দোকানে গেলে এখনই সার পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবারই ব্যবসায়ীরা সার মজুদ রেখে ভরা মৌসুমে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দাম বাড়িয়ে দেন। এবার কেজি প্রতি ছয় টাকা বাড়িয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে সার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।  

একই কথা জানিয়েছেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কৃষক তুহেল মিয়া, পায়েল মিয়া, মনির হোসেন এবং আবু মিয়াও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিআইসি’র একজন ডিলার বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ডিলারদের কাছ থেকে সার কিনে নিয়েছেন। ইউরিয়া সার মজুদ করে তারা তাদের গুদামে রেখে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা আগের দামে সার কিনে রাখলেও পহেলা আগস্টে ছয় টাকা বেড়ে যাওয়ায় তারা নতুন দামে সার বিক্রির সুবিধা নেবেন। 

কৃষি বিভাগ, ডিলার ও কৃষকদের বক্তব্য বিবেচনা করলে গত জুলাই মাসে জেলায় ব্যবসায়ীদের কাছে ইউরিয়া সার মজুদ হয়েছে অন্তত এক হাজার মেট্রিক টন। রোপা আমনের ভরা মৌসুম শুরুর আগ পর্যন্ত প্রতি মাসেই সার মজুদ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত গুদামে। তবে বোরো মৌসুমে চাহিদা বেশি হওয়ায় সার মজুদের পরিমাণ বেড়ে যায় আরও অনেক গুণ, যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, সরকার সারের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় তাদের কোনো লোকসান হবে না। লোকসান হবে কৃষকদের এবং অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নেবেন খুচরা বিক্রেতারা। এসব তথ্য দিয়েছেন জানতে পারলে ডিলার সমিতির চাপে পড়তে হবে বলেও যোগ করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আট হাজার ২২০ হেক্টর। তাদের হিসেবে এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে। 

সার মজুদের বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আশেক পারভেজ বলেন, কিছু জায়গায় পুরোনো দামের সার মজুদ করে রেখে নতুন দামে বিক্রির চেষ্টার খবর এসেছে। এ দুর্নীতি বন্ধে কৃষি বিভাগ সতর্ক রয়েছে।