Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

ইডেনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ: ‘বহিষ্কার’ গঠনতন্ত্র বিরোধী?

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির পর গঠিত তদন্ত কমিটির ১২ নেতা ও ৪ কর্মীকে বহিষ্কার করে যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, সেটিতে ‘গঠনতন্ত্র’ লঙ্ঘনের কথা বলা হচ্ছে। দোষীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে তদন্ত চলমান অবস্থায় ‘স্থায়ী বহিষ্কার’ করা যায় কি না, সেই প্রশ্ন জোরালোভাবে উঠেছে। এ নিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরব হয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বহিষ্কার হওয়া নেতারা বলছেন, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানামুখী অভিযোগ স্বত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটি ‘প্রতিহিংসা’ থেকে।

রোববার মধ্যরাত থেকে রাজধানীর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। সংগঠনের সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস কয়েকদিন আগে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ করেন, সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা চাঁদাবাজি ও সিট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এসব বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় রাতে জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারধর করে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপরই কলেজ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সকালে কলেজ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ এবং তাদের বিরোধী একটি পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।

এ সময় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ছাত্রলীগের বিরোধী গ্রুপের হাতে প্রহৃত হন। সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাকেও পুলিশ পাহারায় হল থেকে বের করা হয়।

এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশিকে যুক্ত করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে ২৪ ঘটনার মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত এবং ‘প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে’ ১২ নেতা ও ৪ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। তারা হচ্ছে সহ-সভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, তানজিলা আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা উর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এস এম মিলি, সাদিয়া জাহান সাথী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিত্তি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি এবং কর্মী রাফিয়া নীলা, নোশিন শার্মিলী, জান্নাতুল লিমা, সূচনা আক্তার।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই সিদ্ধান্তের পর প্রশ্ন উঠেছে, কোনো প্রকার কারণ দর্শানের নোটিশ ছাড়া এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত স্থায়ী বহিষ্কার করা যায় কি না? এটা গঠনতন্ত্র বিরোধী! এ নিয়ে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে ২২ পৃষ্ঠায় ১৭ ধারার (খ) উপধারায় বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের যেকোনো শাখা উপযুক্ত কারণ দর্শিয়ে কোন অভিযুক্ত সদস্যর সদস্যপদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে পারবেন। (গ) উপধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ অভিযুক্ত সদস্যদের বিষয়ে নিজস্ব তদন্ত পরিচালনা করে প্রয়োজনে আরও কঠোর শাস্তি অথবা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন।

এ সম্পর্কে বহিষ্কার নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু তদন্ত না করে তাদের কোনো বক্তব্য না নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা প্রতিহিংসা। গত পাঁচ মাস ধরে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ কেন্দ্রে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যখন সংগঠনের সহ সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারধর করা হলো তখনও কিছু বলেনি কেন্দ্র। যখন প্রতিবাদ করা হলো তখন বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হলো।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য তিলোত্তমা শিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছি। প্রাথমিক তদন্তে যে ভিডিওগুলো আসছে সেগুলো দেখে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটাই শেষ নয়, আমরা অধিকতর তদন্ত করে দেখবো, যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে গঠনতন্ত্রের কোনো লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করেন না তিনি।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির অপর সদস্য বেনজির হোসেন নিশি বলেন, তিনি এই তদন্তে ছিলেন না। তবে বহিষ্কারের আদেশে কোনো গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন হয়নি বলে তিনিও মনে করেন।

নিশি বলেন, এদের এখানে দোষ আছে। যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের অপরাধ প্রমাণিত।

এদিকে ‘বহিষ্কারাদেশ’কে ‘প্রতিহিংসা’ মন্তব্য করে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছের নেতাকর্মীরা। তারা এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

একই সঙ্গে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার না করা হলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে অনশনের ঘোষণা দেন তারা।

‘ইডেন কলেজের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাকে কেন মারধর করা হলো’ সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রোববার সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি, যিনি রোকেয়ো হলের সাবেক এজিএস ফাল্গুনি দাস তন্নীকে মারধর করার পর কেন তাকে বহিষ্কার করা হলো না? সেই নেত্রীকে নিশিকে ইডেন কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত করা হয়েছে।

দুইপক্ষের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত না নিয়ে কেন এক পক্ষকে বহিষ্কার করা হলো সেই প্রশ্ন রেখে তারা বলেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে সরাসরি স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো কেন? তাহলে কি কি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এসব অন্যায়ের পক্ষে?

পড়ুন

ইডেনে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীদের আমরণ অনশনের হুমকি

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত, ১৬ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার

ইডেন কলেজের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২