Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে: প্রধানমন্ত্রী

এবারের জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সকল সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭৭তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন আরও সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করবে।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের অংশগ্রহণ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের অংশগ্রহণ করতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে আসার পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের হাইলেভেল ইউক চলাকালে মোট ৮টি উচ্চ পর্যায়ের সভা ও সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ১২টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, করোনা মহামারি ও বিশ্বে চলমান বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। নতুন এ সংকটের ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। 

‘এ প্রেক্ষাপটে, এবারের সাধারণ অধিবেশনে করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা; বহুপাক্ষিকতাবাদ, বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা, বৈশ্বিক সংকটের মুখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ, সংকট মোকাবিলায় উপযুক্ত তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনায় গুরুত্ব পায়।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে তার দেওয়া ভাষণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সংকট এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তির জন্য অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করা প্রয়োজন। এসকল সংকটের কারণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই।

সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ওপর গুরত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত শান্তি ও উন্নয়ন ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি বর্তমান সংকট নিরসনে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।’

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং সাফল্যের কথা তুলে ধরার কথাও জানান তিনি।

বিশ্বশান্তির লক্ষে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে এক মিলিয়নের বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ কোনটিই এখনও সফল হয়নি। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চলমান সংঘাত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে দুরূহ করে তুলেছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানাই।

জাতিসংঘের অধিবেশনের সভাপতি সাবা করোসির আমন্ত্রণে বিশ্বের নারী নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সভায় বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরি। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে নারীর সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারী নেতৃত্ব গঠন ও প্রসার নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করি। এ ছাড়াও লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবহিত করি।

এ ছাড়া টেকসই আবাসন বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে, গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে একটি রিসিপশনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণের কথা ও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমি ৫টি প্রস্তাব তুলে ধরার কথা ও জানান শেখ হাসিনা।

একই দিন ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস গ্রুপের আয়োজনে একটি উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, চিকিৎসা শিল্প, সামুদ্রিক শিল্প, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্কসহ বিদ্যমান অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগের জন্য মার্কিন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানাই।

এ ছাড়াও এবারের অধিবেশন চলাকালে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।