Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

জনগণ বাঁচলে দেশ বাঁচবে অমল বড়ুয়া

গ্যাসের স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের রাশ টানা শুরু হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও তরলীকৃত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব। তাই সরকারি অফিসে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। আর শুরু হয় এলাকাভিত্তিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট (লোডশেডিং)। সিদ্ধান্ত হয় রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ রাখা ও সপ্তাহে একদিন তেলের পাম্প বন্ধ রাখার। গ্যাসের ঘাটতির কারণে গড়ে দিনে ৮০০-১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে দেশের চাহিদা মেটাতে আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের চড়া দামও বিপদ বাড়ানোর আরেক কারণ। পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে বিদ্যুতের মোট গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৩২ লাখ। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও তথ্য বলছে এতে এক দশকে সরকারের অনুমিত খরচ হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে ইউনিট প্রতি ৮ টাকার বেশি। বাংলাদেশে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে জ্বালানি সংস্থানও সুনিশ্চিত করা জরুরি। জ্বালানি-বিষয়ক সাময়িকী এনার্জি এন্ড পাওয়ারের মতে, বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসের দাম যত বাড়বে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
৫ জুন থেকে কার্যকর হয় গ্যাসের বর্ধিত দাম। বাড়ানো হয়েছে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত ৫ আগস্ট শুক্রবার মধ্যরাত থেকে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৪২-৫১ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়। হঠাৎ এক ধাপে মোটাদাগে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে ওঠে। দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। টান পড়েছে জীবিকায়ও। এখন বর্ধিত মূল্যের ফলে বিপিসির ৪৫ টাকা করে লাভ থাকবে পেট্রল ও অকটনের লিটার প্রতি। কেবল ৮ টাকার মতো ডিজেলের লিটারপ্রতি ভর্তুকি দিতে হবে। তাছাড়া জ্বালানি পণ্য থেকে সরকার ৩৫ শতাংশ কর পেয়ে থাকে। দাম বাড়লে এ খাত থেকে সরকারি আয়ও বাড়বে। বিপিসির মতে ২০২১-২২ সালে মোট জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল প্রায় ৭০ লাখ টন। এর মধ্যে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৬০২ টন অকটেন; ৪ লাখ ৪৬ হাজার টন পেট্রল। বিপিসির বিক্রি করা মোট জ্বালানি তেলের ৬৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে, কৃষি খাতে ১৬ শতাংশ, শিল্প খাতে ৭ শতাংশ আর বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত হয় ১০ শতাংশ। দেশে জ্বালানির দাম বেড়েছে কেবল তা নয়। দাম বৃদ্ধির অপ্রতিরোধ্য প্রভাব পড়েছে অন্যান্য খাতসমূহেও। ৮ জুলাই পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। যা কার্যকর হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে।
পরিবহনসহ দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে বেকায়দায় পড়েছে মানুষ, তৈরি হচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা। কারণ দ্রব্যমূল্য ও সেবা খাতের খরচ বৃদ্ধির মতো সাধারণ নাগরিকদের আয় বাড়ছে না। এই অসহনীয় চড়া মূল্যের কারণে দুর্ভোগে আছে খেটে-খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। তথৈবচ অবস্থায় আছে মধ্যবিত্তরা। দুর্বিষহ টানাপড়েনে সাধারণ জনগণ। দ্রব্যমূল্যের এমন লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ যাবে কোথায়? এখন জনগণের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। এই জনবিপর্যয় থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ব্যবসার দুষ্টুচক্রকে ভাঙতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। গুটিকয়েক আড়তদার ও সিন্ডিকেটকে কঠোর হস্তে দমন করা না গেলে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, জ্বালানি তেলের দাম বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। জ্বালানি তেলের ওপর সরকারি কর ও ভ্যাট মওকুফ করেও দামের লাগাম টানা যায়। তৃতীয়ত, কৃষি পণ্যের ভর্তুকি চলমান রাখা উচিত। একই সঙ্গে যদি বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়, তবে উৎপাদন শিল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোকে আরো বেশি জনবান্ধব ও মানবিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এই সব সংস্থা জনবান্ধব না হলে তাদের নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতাও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। জনগণ বাঁচলে দেশ বাঁচবে।

অমল বড়ুয়া : লেখক, চট্টগ্রাম।
[email protected]