Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

কল্পনাতীত জয়ে আশার নতুন সূর্য

সাকিব আল হাসানকে এরকম উল্লাস করতে শেষ কবে দেখেছেন? দৌড়ে মাঠে ঢুকে সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজকে জাপটে ধরেছেন। প্রায় কোলেই উঠে যাচ্ছিলেন। বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। হাসছেন। চিৎকার করছেন। এক পর্যায়ে মিরাজকে কাঁধেও তুলে নেন তিনি।

টাইম মেশিনে চড়ে পিছিয়ে যেতে হবে দশ বছর। ২০১২ এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে অবিশ্বাস‌্য জয়ের পর এভাবেই ড্রেসিংরুম থেকে দৌড়ে মাঠে প্রবেশ করেছিলেন। বেরিয়ে যাওয়ার পথে হাতে থাকা তোয়ালে উড়িয়ে মেরেছিলেন। এরপর মাঠে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকদের সঙ্গে সে কি উদযাপন…পাক্কা দশ বছর পর সাকিবকে পাওয়া গেল সেই একই উচ্ছ্বাসে।

ওই ম‌্যাচের আগে পরে ভারতকে একাধিকবার হারিয়েছে বাংলাদেশ। হারিয়েছেন সাকিব আল হাসানও। কিন্তু তার এই উচ্ছ্বাসের কারণটা অজানা নয়। দুই প্রতিবেশি দেশের শেষ কয়েক মুখোমুখিতে জয়ের তীরে গিয়ে তরী ডোবানোর কষ্ট তার থেকে ভালো আর কে জানেন?

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে অভিশপ্ত ১ রানের হার, ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনাল হার, শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে শেষ বলে ছক্কায় হার। কিছুদিন আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অ‌্যাডিলেডে ৫ রানের হারের ক্ষত তো এখনও তরতাজা। প্রতিটি হার বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছে।

ক্রিকেটারদেরও কষ্ট বাড়িয়েছে। পাশাপাশি তাদের দায়িত্ববোধ, সামর্থ‌্য নিয়ে বিরাট প্রশ্নও আঁকা হয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষেই কেন বারবার সহজ ম‌্যাচ হাতছাড়া হচ্ছিল সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল চারিদিকে।

অ‌্যাডিলেডে হারের পর সাকিব পরাজয়ের এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। বারবার এমন বিব্রতকর হারের কারণগুলো তার কাছে স্পষ্ট ছিল না। নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছিলেন এভাবে, ‘এরকম পরিস্থিতিতে (ক্লোজ ম‌্যাচ) আমাদের অভিজ্ঞতা কম এবং ঘাবড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ, আমরা খুব বেশি ক্লোজ ম‌্যাচ খেলি না। আমরা যখন এরকম পরিস্থিতিতে পরি তখন কি করতে হবে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। এখান থেকে বের হওয়ার পথ আমাদের নিজেদেরই খুঁজতে হবে।’

সাকিবের চাওয়া মতো আজ মেহেদী হাসান মিরাজ সেই কাজটাই করে দেখিয়েছেন। নিজের পথ নিজে খুঁজে দলকে দিয়েছেন অবিশ্বাস‌্য এক জয়ের স্বাদ। পরাজয়ের যে সীমান্ত অতিক্রম করে সাকিব জয়সূর্য দেখতে চেয়েছিলেন, মিরাজ তা সফল করেছেন। দল যখন খাদের কিনারায় তখন মোস্তাফিজকে সঙ্গী করে শেষ উইকেটে জয়ের বন্দরে নোঙর করেছেন।

ভারতের করা ১৮৬ রানের মামুলী লক্ষ‌্য তাড়া করতে গিয়ে ব‌্যাটসম‌্যানদের ব‌্যর্থতায় বাংলাদেশের রান ৯ উইকেটে ১৩৬। সেখান থেকে জয়ের চিন্তা করা কেবল মাত্র সাহসী কারও পক্ষেই সম্ভব ছিল। মিরাজ ২২ গজে সেই সাহসটাই দেখান। তাকে সঙ্গ দেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুজন হাতে ১ উইকেট রেখে অবিচ্ছিন্ন ৫১ রান তুলে লক্ষ‌্য ছুঁয়ে ফেলেন অনায়াসে।

ভারতের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে অন‌্যান‌্য ব‌্যাটসম‌্যানরা যখন নতজানু, টিকে থাকতে সংগ্রাম করছিলেন তখন মিরাজ প্রতি আক্রমণে জবাব দিয়েছেন। নিয়মিত বাউন্ডারি তুলেছেন, এক-দুই রানে স্ট্রাইক রোটেট করেছেন। ছক কাটা পরিকল্পনা, হিসেব করে ঝুঁকি নেওয়া, সঙ্গী মোস্তাফিজকে বারবার বুঝিয়ে সব দায়িত্ব নিজে পালন করেছেন। শেষমেশ দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন গ্ল‌্যাডিয়েটর মিরাজ। তাতে দল থেকে পেয়েছেন রাজসিক সম্মান। মাঠে দলীয় উদযাপন শেষে তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ড্রেসিংরুমে।

ভারতের মতো বড় দলকে হারানোর আনন্দ দিগন্ত বিস্তৃত। তবে এই জয় সেই আনন্দকে দ্বিগুণে পরিণত করছে পরাজয়ের বৃত্ত ভেঙেছে বলে। সঙ্গে অন্তিত মুহূর্তে নিজেদের পক্ষে ফল পাওয়ার নতুন আশার সূর্য উদয় হওয়ার সুখস্মৃতি তো রয়েছেই। অবিশ্বাসের দেয়াল ভাঙার উদযাপন সাকিবের মতো খ‌্যাপাটে না হলে কি হয়!