Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

ক্রিকেটার হওয়ার আগে যা হতে চেয়েছিলেন সিকান্দার রাজা

ক্রিকেটার হওয়ার আগে যা হতে চেয়েছিলেন সিকান্দার রাজা

 ক্রিকেটার হওয়ার আগে যা হতে চেয়েছিলেন সিকান্দার রাজা

স্পোর্টস ডেস্ক : সিকান্দার রাজা প্রায় একাই বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও এরপর ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে জয় এনে দিলেন। 

যদিও জিম্বাবুয়ে দলে অন্যরাও পারফর্ম করেছেন, তবে গত ২ ম্যাচে তিনি যেভাবে সেঞ্চুরি করে রান তাড়া করলেন তাতে সিকান্দার রাজা ক্রিকেট মহলে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু।

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার আকাশ চোপড়া টুইট করেছেন, সামনে ভারতের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের খেলা আছে, সেখানে সিকান্দার রাজার দিকে নজর রাখতে বলছেন চোপড়া।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক তারকা ক্রিকেটার ইয়ান বিশপ নিজের টুইটার পাতায় লিখেছেন, ‘সিকান্দার রাজা সম্প্রতি যা করছেন তার স্বীকৃতি আরো ভালোভাবে দেয়া উচিত। পর পর দুই ওয়ানডে ম্যাচে সেঞ্চুরি।’

প্রায় পাঁচ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের কোনো পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে জয় পেয়েছে জিম্বাবুয়ে, আর সেখানে নায়ক সিকান্দার রাজা। পাকিস্তানের ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ টুইটারে লিখেছেন, ‘হারারের দর্শকরা খুশি ও তারা হাসছেন এটা দারুণ লাগছে।’

আলোচিত এক মাইন্ড ট্রেনার বদলে দিচ্ছেন তাসকিন-সাব্বিরদের টেস্ট ক্রিকেট দল থেকে মাহমুদু্ল্লাহ বাদ পড়লেন যে কারণে ৪ ম্যাচে চার হার বাংলাদেশের, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অসহায় রিয়াদ-মুশফিক সিকান্দার রাজা কেন আলোচনায় সিকান্দার রাজা এমন এক পরিস্থিতিতে শেষ ২ ম্যাচে ব্যাট করতে নেমেছেন যখন দলের টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছে, রাজা একইসাথে ইনিংস মেরামতের কাজও করেছেন এবং রানের চাকা সচল রেখেছেন।

সিকান্দার রাজার সাথে বাংলাদেশের ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রান নেয়ার তরিকায় মূল পার্থক্য ছিল রাজা শুধুমাত্র চার-ছক্কার ওপর নির্ভরশীল নন, তিনি উইকেটের চারিদিকে সিঙ্গেল ও ডাবল নেয়ার দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন। এর ফলে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মাত্র ৫৬ রান তিনি বাউন্ডারিতে নিয়েও ১১৭ রান তুলেছেন ১২৭ বলে।

দুটি ওয়ানডেতেই সিকান্দার রাজা ৯০-এর বেশি স্ট্রাইক রেট ধরে রেখেছেন। ইএসপিএন-ক্রিকইনফোর একজন দর্শক মন্তব্য করেছেন, সিকান্দার রাজা জিম্বাবুইয়ান তাই তেমন আলোচনা হয় না। কিন্তু তিনি শোয়েব মালিক ঘরানার ক্রিকেটার, যারা একইসাথে উইকেটে টিকে থাকতে পারেন এবং কোনো ঝুঁকি না নিয়ে রান তুলে আনতে সক্ষম।

সিকান্দার রাজা ব্যাট করতে নেমেছেন এমন শেষ ১০টি ওয়ানডে ম্যাচে দুটি অপরাজিত সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, তিন অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন।

বিমান বাহিনী থেকে ক্রিকেটে পাকিস্তানে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটারের জন্য ক্রিকেটে আসার পথটা সহজ ছিল না। দুর্দান্ত কোনো প্রতিভা ছিলেন না তিনি। ক্রিকেট খেলাটাকে আয়ের উৎস হিসেবেই দেখেছেন সবসময়।

সিকান্দার রাজা ম্যাচ শেষে নিজের অতীতে ফিরে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিমান বাহিনীতে ছিলাম। আমরা কখনো হার মানি না। আমি ব্যথা পাই, আমার আঙ্গুল ভাঙ্গে কিন্তু এসবে আমার কোনো কিছু যায় আসে না।’

সাড়ে তিন বছর পাকিস্তানের এয়ার ফোর্স কলেজে পড়ার স্মৃতিতে ফিরে যান তিনি। তিনি বলেন, আমি হয়তো যোদ্ধা পাইলট হতে পারিনি শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আমি মানুষ হিসেবে একজন যোদ্ধা।’

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট সাংবাদিক ডেনিয়েল আলেকজান্ডারের মতে, ‘প্রেরণা, লেগে থাকা এবং পুরো হৃদয় নিংড়ে দিয়ে খেলেন সিকান্দার রাজা, তার পারফরম্যান্স দুর্দান্ত এবং উদযাপনও সুন্দর।’

বিশ্লেষকদের অনেকেই সিকান্দার রাজাকে 'যথাযথ ম্যাচ উইনার' খেতাব দিয়েছেন। পাকিস্তানের উত্তরপূর্বাঞ্চলের শহর শিয়ালকোটে জন্ম হয়েছিল সিকান্দার রাজার। ১১ বছর বয়সেই তার মা-বাবার কাছে যোদ্ধা বৈমানিক হওয়ার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। আরও পড়ুন: জিম্বাবুয়ের এমন জয়ের কারণ জানালেন তামিম

সিকান্দার রাজার প্রোফাইলে ইএসপিএন-ক্রিকইনফোর প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম লিখেছেন, ‘বিমান বাহিনীতে যোগ দেয়ার পরীক্ষায় ৬০ হাজার জনের মধ্যে সেরা ৬০ জনের একজন হয়েছিলেন সিকান্দার রাজা। কিন্তু তৃতীয় বর্ষে চোখের পরীক্ষায় বাদ পড়ে গিয়েছিলেন তিনি।’

এরপর তিনি ভর্তি হন স্কটল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানেতিনি ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছিলেন সেমি-প্রফেশনাল হিসেবে। ২০০২ সালে সিকান্দার রাজা তার মা-বাবার সাথে জিম্বাবুয়ে চলে গিয়েছিলেন। নানা চড়াই উৎড়াই পার করে ২০০৭ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যোগ দেন তিনি।

এরই মধ্যে পড়ালেখাও চালিয়ে যান, ২০১০-১১ মৌসুমে পড়ালেখা শেষ করে পুরোদস্তুর ক্রিকেটে মন দেন সিকান্দার রাজা। সেই বছর ৪১ গড়ে ৬২৫ রান তুলেছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন রাজা।

জিম্বাবুয়ে এরই মধ্যে ক্রিকেটে বেশ পিছিয়ে পড়ে দল হিসেবে, ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও উত্তীর্ণ হতে পারেনি টেস্ট ক্রিকেটের একসময়কার নিয়মিত এই দলটি। সেই কষ্ট সিকান্দার রাজাকে এখনো তাড়া করে।

চলমান বাংলাদেশ সিরিজ শুরুর আগেই একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটা ছিল রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। বিশ্বকাপে খেলা সবসময়ই স্বপ্ন, কিন্তু সেটা যখন আমরা পারিনি। প্রায় দেড় কোটি মানুষের জন্য আমরা কেবলই হতাশা নিয়ে ফিরি।’

এবারে ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য উত্তীর্ণ হয়েছে জিম্বাবুয়ে। যেখানে বড় ভূমিকা পালন করেছেন রাজা। তিনি কাগজে কলমে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক নন কিন্তু দলের ক্রিকেটাররা তার ওপর অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভরশীল এখন।

২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কাকে যেবার হারালো জিম্বাবুয়ে তখনো সিকান্দার রাজা ছিলেন নায়ক, ব্যাট হাতে তো বটেই বল হাতেও ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

জিম্বাবুয়ে এখন আর সেই আগের জিম্বাবুয়ে নেই। এটা সত্য অনেক বছর হয়ে গেছে। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, হিথ স্ট্রিক, অ্যালেস্টার ক্যাম্পবেলের জিম্বাবুয়ে হারিয়ে যাওয়ার পর ট্যাটেন্ডা টাইবু, ব্র্যান্ডন টেলররা চেষ্টা করেছেন কিন্তু বেশি দিন ধরে রাখতে পারেননি।

ফলে বাংলাদেশের সাথে জিম্বাবুয়ের লড়াইটা একপেশে হয়ে গিয়েছিল সাম্প্রতিক সময়ে। এবারে ১০ বছর পর জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর সিকান্দার রাজারা বার্তা দিলেন যে জিম্বাবুয়ের সক্ষমতা আছে। সূত্র : বিবিসি