Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

করতোয়ায় নৌকাডুবি : নৌদুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা

হাঁটুজলের নদী হিসেবে পরিচিত করতোয়া এখন এক আতঙ্কের নাম। গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবি ঘটনায় ৬৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আছে আরো অনেক মানুষ।
মন্দিরে মন্দিরে রং তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠছে প্রতিমা কিন্তু অপরদিকে বন্যা নামের বধূটির হাতে মেহেদির রং পুরোপুরি মুছে যায়নি। তবে তার স্বামী হিমালয় করতোয়া নদীতে নিখোঁজ। চিরতরে সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল বন্যারানির। শারদীয় দুর্গোৎসবের আগে মহালয়ায় পুণ্য অর্জনের জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়ার পূর্ব পাড়ে বদেশ্বরী মন্দির দর্শনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন তারা। করতোয়া নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে মন্দিরে গিয়ে করতোয়ার পানিতেই পুণ্যস্নান করে পাপমুক্তির আশা ছিল তাদের। কিন্তু সব আশা হারিয়ে যায়। মাঝনদীতে নৌকা উল্টে সবাই হাবুডুবু খেতে থাকে পানিতে। কিছুসংখ্যক মানুষ সাঁতার কেটে নদী-তীরে উঠে জীবন বাঁচায়। আর অধিকাংশ মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে। এ দুর্ঘটনায় ওই অঞ্চলের আকাশ-বাতাস মানুষের কান্নার শব্দে ভারি হয়ে ওঠে। সারি সারি লাশের দৃশ্য। সেই লাশের সারিতে নিথর দেহ নিয়ে শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, বুদ্ধ ও বৃদ্ধা পড়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে মনে পড়ে যায় রানা প্লাজার শ্রমিকের লাশের সারির কথা, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের বিস্ফোরণে মানুষ আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়ার কথা। অতীত ও বর্তমানে এতগুলো মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী কে?
কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও ঘাট ইজারাদারের অবহেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এত মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।
‘অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল আইন-২০২১’ নামে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেই খসড়া আইনটির ৭৩ ধারায় অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের ৮০ ধারায় কোম্পানির পরিচালকদেরও সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী করে শাস্তি দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় সেই আইন যেন কাগজের পাতায় সীমাবদ্ধ। বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। কবে এই আইন বাস্তবায়িত হবে? ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ এই সেøাগান নিয়ে প্রথম দাবি তুলেছিলেন সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ শ্রদ্ধেয় নির্মল সেন। আজো তার দাবি প্রাসঙ্গিক। যতগুলো অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তার বেশিরভাগের জন্য কর্তব্যরত কর্মকর্তার অবহেলাই প্রকাশিত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে গত ৭ বছরে ৪ হাজার ৭৯১টি নৌদুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ২৩৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ২ হাজার ৭১৪ জন। নৌপথে দুর্ঘটনাগুলোর প্রায় ৫৪ শতাংশই অন্য নৌযানের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাক্কা লেগে হয়েছে। বাকি দুর্ঘটনার কারণ বৈরী আবহাওয়া, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, লঞ্চের তলা ফেটে যাওয়া, যান্ত্রিক ত্রæটি, আগুন লাগা ও বিস্ফোরণ ইত্যাদি।
প্রত্যেকটি মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চে সার্ভে সনদ ও রুট পারমিট প্রদান বন্ধ করতে হবে। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে হবে। অদক্ষ চালকদের দক্ষ করতে হবে। দেশে একেকটি দুর্ঘটনায় সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ, দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ জরুরি। নৌদুর্ঘটনাসহ সব ধরনের দুর্ঘটনা বন্ধে বিশেষজ্ঞরা যেসব সুপারিশমালা বিভিন্ন সময়ে প্রদান করেছেন সেসবের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাশেদুজ্জামান রাশেদ
লেখক, ঢাকা।
[email protected]