Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

কুমিরের মুখ থেকে ফেরা রাজু বললেন, ‘হাঁটুতে কামড়ে ধরে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়’

মোংলা ও সুন্দরবনের কোলঘেঁষা বানিশান্তা ইউনিয়ন। এলাকাটি খুলনার দাকোপ উপজেলার আওতাধীন। নিবৃত এ পল্লী এলাকার পূর্ব ঢাংমারী গ্রামের খ্রিস্টানপাড়ার বাসিন্দা নজরুল হাওলাদার। তিনি ও তার পরিবার সুন্দরবনের ওপরই নির্ভরশীল। নদীতে মাছ ধরেই জীবিকা চলে তার পরিবারের।

নজরুল হাওলাদারের ৩ ছেলের মধ্যে রাজু হাওলাদার (২২) ছোট। পরিবারের সবকিছুই চলছিল স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ করে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে এই জেলে পরিবারটির। কারণ সুন্দরবনের খালে গোসল করতে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে রাজুর। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফিরলেন কলেজছাত্র

কিন্তু তার ডান পায়ের উরুতে কুমিরের ধারালো দাঁতের ৪টি আঁচড় স্পষ্ট। এ ক্ষত এখন রাজুকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।  ঘটনা মনে করতেই ভয়ে আঁতকে উঠেন রাজু।

বুধবার (১০ আগস্ট) বিকেলে রাজুর বাড়িতে গেলে কুমিরের আক্রমণ থেকে ফিরে আসার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তিনি। রাজু জানান, তার বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া সুন্দরবনের ঢাংমারী খালে গোসল করতে নামেন। এক পর্যায়ে কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে মাথায় শ্যাম্পু মাখছিলেন তিনি। এরই মধ্যে হঠাৎ করে একটি কুমির তাকে আক্রমণ করে। কুমিরটি রাজুর ডান পায়ের হাঁটুর ওপরের দিকে কামড়ে ধরে প্রায় ১৫-১৬ হাত পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়।  এ সময় জীবন বাঁচাতে কুমিরের চোখে আঙুল ঢুকিয়ে সজোরে আঘাত করেন। চোখে আঘাত পেয়ে কুমিরটি রাজুকে ছেড়ে দেয়। তখন তিনি দ্রুত উঠে মা-বাবা বলে চিৎকার করেন। এ সময় খালের পানি তার রক্তে লাল হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক তার মা-বাবা পাড়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।

ঘটনা এখানেই শেষ না। রাজু পাড়ে উঠার কয়েক মিনিটের মধ্যে কুমিরটিও তাকে ধরতে তাড়া করে খালের পাড়ে ওঠে। কিন্তু লোকজনের শব্দ পেয়ে খালে ডুব দিয়ে চলে যায়। কুমিরের কামড়ে রাজুর পায়ের ক্ষত জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন অনেকটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন।

রাজুর বাবা নজরুল হাওলাদার, মা মরিয়ম বেগম এবং বড় ভাই মনির হাওলাদার ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে রাইজিংবিডিকে বলেন, গ্রামের অধিকাংশ লোকজন ঢাংমারী খালে নেমে মাছ ধরা ও গোছলসহ বিভিন্ন কাজে নামে। কিন্তু কুমির কাউকে আক্রমণ করেনি। তবে হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু রাজুকে আক্রমণ করবে এটা কেউ ভাবতে পারেননি।

রাজু বেঁচে ফেরায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করলেও তার চিকিৎসার অর্থ যোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বাড়ির একটি ছাগল বিক্রি করে তার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু বন বিভাগের পক্ষ থেকে বা কোন জনপ্রতিনিধি তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। এ বিষয়ে দরিদ্র এ পরিবারের পক্ষে সহায়তার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারা।

রাজুর চাচাতো ভাই আসিফ শেখ বলেন, তারা এখন ঢাংমারি খালে নামতে ভয় পাচ্ছেন। অথচ তাদের রুজির উৎস সুন্দরবন ও এই খাল। এই অবস্থায় তাদের কি করণীয় বুঝতে পারছেন না। সুন্দরবন কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না।