Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

মাগুরায় নারীদের অংশগ্রহণে দুর্গা পূজা 

উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসর আর ঢাকের তালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হলো আজ (শনিবার)। আর এই উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে মাগুরায় দুর্গাপূজার সব আয়োজন করছেন নারীরা। প্রতিমা তৈরি থেকে দেবীর সাঁজগোজ এমনকি পূজার যাবতীয় কেনাকাটার কাজ করেছেন তারা। 

নারীদের আয়োজনে এমন ব্যতিক্রমী দুর্গাপূজার আয়োজন হয়েছে মাগুরা সদর উপজেলার বাঁশকোঠা গ্রামে। পাটকাঠির বেড়া আর টিনের ছাউনি দিয়ে অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরি করে ৯ বছর ধরে এভাবেই শারদীয় দুর্গাপূজা করছেন এই গ্রামের নারীরা।

সারা বছর নারীরা একটু একটু করে অর্থ জমিয়ে পূজার কাজে ব্যায় করেন। তবে এ বছর সব প্রকার দ্রব্যের দাম বেশি হওয়ায় খচর মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন আয়োজকরা।

পূজা আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য পুষ্প বিশ্বাস বলেন, ‘বাঁশকোঠা গ্রামের নারীদের উদ্যোগে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রথমে এলাকার কিছু মানুষ বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি। পূজা করা নিয়ে এসেছে নানা বাধা। তবে সব বাধা উপেক্ষা করে আমরা নারীরা পূজার আয়োজন করছি। সর্বজনীন এ দুর্গাপূজার যাবতীয় আয়োজন নারীরা নিজেরাই করে থাকেন।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঢাকী থেকে শুরু করে পূজারী, বাজার করা, অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো, প্রসাদ বিতরণ এবং প্রতিমা বির্সজনসহ সব প্রকার কাজ গ্রামের নারীরা করেন। 

পূজা কমিটির সভাপতি অঞ্জলি টিকাদার বলেন, ‘আমাদের কমিটিতে বর্তমানে ১৫ জন নারী সদস্য আছেন। আমরা প্রথম বছর যখন পূজা শুরু করি তখন পূজা শেষে আমাদের ফান্ডে ২২ হাজার টাকা বেঁচে যায়। ওই টাকা দিয়ে কালি মন্দিরের পাশে নতুন একটি শিব মন্দির তৈরি করেছি। করোনার দুই বছর আমরা পূজা করেছি সীমিত পরিসরে। সারা বছর নারীরা পূজা করার জন্য টাকা সঞ্চয় করেন। এই টাকা দিয়েই পূজার মূল কাজ চলে।’ 

এই কমিটির আরেক সদস্য সীমা রানি বিশ্বাস বলেন, ‘এ বছর সরকারিভাবে আমরা ৫০০ কেজি চাল পেয়েছি। তাছাড়া আমাদের এলাকার নারীরা পূজায় অর্থিকভাবে সহযোগীতা করেন। কিন্তু এবছর সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় খরচ মেটাতে পারছি না।’

স্থানীয় সংবাদকর্মী জয়ন্ত জোয়ার্দার বলেন, ‘নারীদের আয়োজনে দুর্গাপূজা উদযাপন এলাকায় সাড়া ফেলেছে। এখন অনেক দূর থেকে এখানে পূজা দেখতে আসেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।’

মাগুরা জেলা পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি বাসুদেব কুন্ড বলেন, ‘সব স্থানেই আমরা দেখি পুরুষরা পূজা পার্বনের আয়োজন করছেন। নারীরা আমাদের পূজার কাজে সহজযোগীতা করেন। কিন্তু বাশঁকোঠা গ্রামে ৯ বছর ধরে একটি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে- যেটা শুধুমাত্র নারীরা আয়োজন করেন। এটা আমাদের জেলার ব্যাতিক্রম একটি পূজা।’

মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তারিক-উল-হাসান বলেন, ‘হাজার সমস্যা উপেক্ষা করে নারীরা দুর্গাপূজা করছেন এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। সব স্থানে নারীদের ভূমিকা অপরিসীম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই নারীদের পূজাকে সার্থক করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

শনিবার (১ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা। চলেবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এবছর মাগুরা জেলার চারটি উপজেলার ৬৯৬টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা।