Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

পরিদর্শনের মধ্যেও বাড়ছে ডলারের দাম: রেকর্ড ১১৫ টাকা

ucb stock regular

বাংলাদেশ ব্যাংকের অব্যাহত পরিদর্শনের মধ্যেও খোলাবাজারে বাড়ছেই ডলারের দাম। খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। দেশে মুদ্রাবাজারের ইতিহাসে এক দিনে ডলারের বিপরীতে টাকার মানের এতটা অবমূল্যায়ন হয়নি।

সোমবার দুপুরে কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে প্রতি ডলার রেকর্ড ১১৫ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। যা আগের দিন রোববার বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। এর আগে ২৭ জুলাই খোলাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১১২ টাকা।

এদিকে বাড়তি দামেও খোলা বাজারে চাহিদামতো ডলার মিলছে না। অর্থাৎ দাম বাড়ার পরও খোলা বাজারে ডলারের সংকট দেখা গেছে। রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন এলাকার বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জার ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।

LankaBangla securites single page

দেশে খোলা বাজারে প্রথমবারের মতো ডলার ১০০ টাকার ঘর পেরিয়ে যায় গত ১৭ মে। এরপর আবার কমে আসে। পরে গত ১৭ জুলাই ফের ১০০ টাকা অতিক্রম করে। গত মাসের শেষ দিকে নগদ ডলার ১১২ টাকায় উঠেছিল।

কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, খোলাবাজারে তীব্র সংকট রয়েছে ডলারের। ব্যাংকের মতো খোলাবাজারেও ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রবাসীদের দেশে আসা কমেছে, বিদেশি পর্যটকরাও কম আসছেন। এ কারণে ডলারের সরবরাহ কম।

এই প্রসঙ্গে যমুনা মানি এক্সচেঞ্জের সত্ত্বাধিকারি আনিসুজ্জামান অর্থসূচককে বলেন, বাজারে ডলারের তীব্র সংকট রয়েছে। কিছু মানুষ ডলার মজুদ করে রেখেছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা বেশি দাম দিয়েও ডলার কিনতে পারছি না। ফলে গ্রাহকদেরও চাহিদা মত ডলার সরবরাহ করতে পারছি না। চাহিদা মত গ্রাহকের ডলার দিতে না পারায় বেশ কিছুদিন যাবত অফিস বন্ধ করে রেখেছি।

একদিনের ব্যবধানে এত দাম বাড়ার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে ডলারের দাম উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর দাম বাড়ছেই৷ আর চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ডলার নেই। অনেকে ডলার কিনে ধরে রাখতে চাইছে। অনেকে ডলার কিনতে এলেও সবাইকে দেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খোলাবাজার থেকে যে কেউ ডলার কিনতে পারেন। ব্যাংক থেকে কিনতে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করতে হয়। যে কারণে অনেকে এখন খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন, যা অবৈধ।

খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংকের আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সেও ডলারের দর অনেক বেড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। সর্বশেষ প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলো এই দরে ডলার কিনেছে। গত একবছরে আন্তঃব্যাংক দর বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার শুরু পর বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম।

বাজার ‘স্থিতিশীল’ করতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিক ডলার বিক্রির কারণে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। গতকাল রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকগুলোতে এখন আমদানির জন্য ১০০ টাকার নিচে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০৭ থেকে ১০৯ টাকায় ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। রেমিট্যান্সের জন্যও ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে।

এদিকে ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহ পর্যন্ত কারসাজির অপরাধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ৪২টিকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।

অর্থসূচক/এএইচআর/এমএস