বৃষ্টি হলে ক্লাসরুমে পানি পড়ে, রোদ উঠলে প্রচণ্ড গরম লাগে। মূল ভবন পরিত্যক্ত, তাই ভাঙা টিনের ঘরে কোনোমতে চলছে লেখাপড়া। আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে।
কথাগুলো বলছিলো রাঙামাটির লংগদু উপজেলার তবলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিকা চাকমা।
স্কুলটির চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা চাকমা বলে, আমাদের এই স্কুলে একটি টিউবওয়েল নাই, আমাদের পানি খেতে খুবই সমস্যা হয়।
জানা গেছে, লংগদু উপজেলার ৭ নং ইউনিয়নের রাঙাপানি ছড়া গ্রামের এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। স্কুলটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার পর ২০১৯ সালের ৬ মে লংগদু উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী ভবনটি পরিত্যক্ষ ঘোষণা করেন। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এদিকে, লংগদুর এই স্কুলটিতে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায় যে, ভবনের চারপাশে দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। দেয়াল,বীম, কলাম,ছাদের প্লাষ্টার খসে পড়েছে এবং রড দেখা যাচ্ছে। এতে করে পুরো ভবনটিই জরাজীর্ণ এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
তা সত্ত্বেও নিরুপায় হয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কার্যক্রম চালাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
পরিত্যক্ত ভবনটির পাশে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য বাঁশ,কাঠ ও টিন দিয়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে কোনরকমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। এত বছরের পুরনো স্কুলে নেই কোনো টিউবওয়েল, টয়লেট যেটি রয়েছে সেটির অবস্থা খুবই নাজুক।
রাঙাপানি ছড়া গ্রামের রিটন চাকমা বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার আগে ভবনের ভিম থেকে ইট খসে পড়ে আমার ছেলের মাথা ফেঁটে যায় এবং হাসপাতালে পর্যন্ত নিতে হয়েছে তাকে।
রাঙাপানি ছড়া এলাকার হেমা চাকমা বলেন, আমার মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় লাগে। কখন আবার বিল্ডিং ভেঙে পড়ে।
প্রধান শিক্ষক স্মৃতি বিকাশ চাকমা বলেন, স্কুলটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। কোনমতে পাশে টিনের ঘরের রুমটিতে ক্লাস করতে হচ্ছে। বর্তমানে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ভীতির কারণ হয়েছে। তাই দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করা জরুরী।
লংগদু ৭ নং ইউপির ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বর দীর্ঘায়ু চাকমা বলেন, বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে টিনশেড ঘরটি করা দেওয়া হয়েছে এতে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করতে পারে না অতিমাত্রায় গরমের কারণে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের পাহাড়ি ঝর্ণা এবং কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করে তৃষ্ণা মেটাতে হয়।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর (পিইডিপি-৪) আওতায় আমাদের সকল বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মিত হবে। যেহেতু প্রকল্পটি চলমান রয়েছে আশা রি দ্রুত সময়ের মধ্যে স্কুলটি নির্মিত হবে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন লংগদুর এই স্কুলটি ক্লাস করার অনুপযোগী, শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছে না, ওয়াশরুম নাই, সুপেয় পানির ব্যবস্থা নাই- এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ আমাকে জানায়নি।
তিনি বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে স্কুলটির সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।