Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

রাজাকে ছোঁয়া সাধ্যের বাইরে

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। মাছে-ভাতে বাঙালি এই প্রবাদের সঙ্গে আমার সবাই কম-বেশি পরিচিত। প্রাচীনকাল থেকে আবহমান বাংলার নদী-নালা, পুকুর, ডোবা, হাওর-বাঁওড় ও সাগর থেকে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। তবে সবচেয়ে আলাদা ও স্বাদ আর ঘ্রাণে যার সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া সেটা হলো বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। ইলিশকে বলা হয় ‘মাছের রাজা’। সেই রাজাকে ছোঁয়াই এখন বাংলাদেশ নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে।

ইলিশ আদতে সাগরেরই মাছ। তবে নদীতে তাকে আসতে হয় ডিম পাড়ার তাগিদে। প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরত্বের এক লম্বা সফরে উপমহাদেশের নদীতে পাড়ি জমায় ইলিশ। বাংলাদেশের ভেতরে সে ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে আসে। উপমহাদেশের সেরা ইলিশ মেলে বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে।

একটা সময় ছিল, ইলিশ যখন যে কোনো মাছের মতোই স্বাভাবিক দরে বিক্রি হতো। কিন্তু তারপর কী যে হলো, ইলিশ চলে গেল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। যখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে, যখন জেলেদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তখনো ইলিশের দাম কমে না। সাধারণ মানুষ ইলিশের স্বাদ নেওয়ার কথা ভুলে যায়।

তবে হ্যাঁ, জাটকা ইলিশ মাছ অনেকেই কেনেন, খান। কিন্তু ইলিশের খাঁটি স্বাদ পেতে হলে অন্তত আট'শ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ পেতে হবে এবং সেই ইলিশ হতে হবে নদীর। তা ছাড়া তার দামটাও যে হয় আকাশছোঁয়া। এখন সে স্বাদ পাওয়ার জন্য যে পরিমাণ টাকা থাকতে হয়, তার অধিকারী নন দেশের বেশির ভাগ মানুষ। তাই বলে বাজারে কি ইলিশ নেই? সেই ইলিশ কেনার কি মানুষ নেই? একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বাজারগুলোয় কিন্তু ইলিশ ব্যবসায়ীরা বিক্রির অভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে নেই। ইলিশের চাহিদা আছে এবং কেনাকাটাও চলছে বেশ। আমাদের দেশে অভিজাত ইলিশ অবিক্রীত থাকে না। কিন্তু সেগুলোর স্বাদ পায় না সাধারণ মানুষ। 
বলা হয় বাংলাদেশ ইলিশ মাছের আঁতুরঘর। সাগর ও নদীতে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করতে পারছে না। অথচ ভারতের কলকাতার বাজারগুলো বাংলাদেশের ইলিশে সয়লাব। পূজার উপহার হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় ইলিশ মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে। 

ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। অথচ বাজারে ইলিশ মাছের দাম গড়ে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি। এছাড়া ইলিশ মাছের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু ইলিশ হলো পদ্মা নদীর ইলিশ। বাজারে পদ্মার ইলিশের দাম গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি। পদ্মা নদী থেকে যে সীমিত পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়, তা বাজারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না। বাজারে যেসব ইলিশ পাওয়া সেগুলো মূলত অন্যান্য নদীর ও সামুদ্রিক ইলিশ মাছ। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের মানুষের চাহিদার কথা চিন্তা না করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারগুলোতে ইলিশের দাম আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরন্তু ভারতে রপ্তানি করা ইলিশগুলো বেশিরভাগই পদ্মা নদীর। যে কারণে পদ্মার ইলিশ যথেষ্ট পরিমাণে আমাদের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশের রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী ইলিশ মাছ মুক্তভাবে রফতানিযোগ্য পণ্য নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাহলে কী করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিলো সাধারণের বোধগম্য নয়। 

দেশের বাজারে যখন ইলিশ সঙ্কট। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম। দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষ্যে ইলিশ ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না তখন কেন ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে? এমন প্রশ্ন বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষের। সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের চাহিদার কথা চিন্তা করে ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।