Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

রুবিনারা সড়কে আর কত প্রাণ হারাবে?

আমাদের দেশে সড়কে মৃত্যুর মিছিল এবং ঘরে বাইরে নারী নির্যাতন এখন স্বাভাবিক ঘটনার মতো অবস্থা তৈরি করেছে। বিশেষ করে পাহাড় থেকে সমতলে নারী শিশু নির্যাতন করে হত্যার ঘটনা পত্রিকার পাতায় পাতায়। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ ৫ বছর বয়সি শিশু আয়াতকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ ছয় টুকরা করে নদীতে ফেলে দেয় আবির আলী নামে এক যুবক। সেই হৃদয়বিদারক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দেশে আরো একটি বীভৎস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায়।
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওতে দেখা যায় ঢাবির ক্যাম্পাস এলাকায় চলন্ত গাড়ির নিচে আটকেপড়া এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ মৃত্যু যেন মর্মান্তিক! এর শেষ কোথায়?
লেখার শুরুতেই ঢাবির ক্যাম্পাসে ওই নারীর মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বললাম তার কারণ হচ্ছে কোনো ব্যক্তি যদি জেনেশুনে কোনো মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় তাহলে সেই মৃত্যু কামনাকারী ব্যক্তিকে হত্যাকারী বলা কোনো ভুল হবে না বলে মনে করি। ঢাবির ক্যাম্পাসে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সারাদেশে আবারো একবার সড়কের অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? আর অপরদিকে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বারবার আন্দোলনে নামছে। সড়কের অব্যবস্থাপনার জাঁতাকলে সাধারণ মানুষ পিষ্ট। কবে নিরাপদ সড়ক পাবে বাংলাদেশের মানুষ? সড়কের মৃত্যুর মিছিল কি চলমান থাকবে? সড়ক নিয়ে এমন শত শত প্রশ্ন মানুষ ভাবতে থাকে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা কিশোর বিদ্রোহ দেখেছি।
সরকারও বলছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। কিন্তু তারপরও কেন দাবিগুলো মেনে নেয়া হচ্ছে না? তার জন্য শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে সড়কের অব্যবস্থাপনার জন্য সমাবেশের মাধ্যমে লাল কার্ড প্রদর্শন করেছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় কাদের বেশি মৃত্যু হয়? বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। একটু ভেবে দেখবেন আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যারা মারা যায় তাদের মধ্যে অধিকাংশ হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন ঢাবির সাবেক শিক্ষক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ক্লাসসহ একাডেমিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশের টিএসসি অভিমুখী সড়কে রুবিনা নামে এক নারী মোটরসাইকেলের পেছনে বসে যাচ্ছিলেন। গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগলে ওই শিক্ষকের গাড়ির নিচে পড়ে আটকে যান রুবিনা। ওভাবেই টেনেহিঁচড়ে গাড়ি চালিয়ে অনেক দূর নিয়ে যান ওই ঘাতক।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে সড়কে নির্মমতায় মৃত্যুর শেষ কোথায়? তবে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ক্যাম্পাসে সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পেরেছে? প্রশ্নের উত্তর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর জানা আছে। ক্যাম্পাসে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল করবে কেন? ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি ক্যাম্পাসে চুরি, ছিনতাই, নারী নিপীড়নসহ নানা অপরাধমূলক কাজ। এসব ঘটনায় অপরাধীদের কি ন্যায্য বিচার হয়েছে? শিক্ষার্থীদের জায়গা পড়ার টেবিল, রাস্তা না। ক্যাম্পাসে তো শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ নেই। এর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সময় এসেছে দেশের মানুষকে বাঁচানোর। তার জন্য নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হবে। ঢাবির ক্যাম্পাসে অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ যানবাহনের ক্ষেত্রে চলন সীমা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটা প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসাতে হবে। সড়কে নিহত নারীর পরিবারের সব ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।
সড়কে শৃৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন নয়। সড়কে প্রতিযোগিতা রোধ এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সড়ক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধে যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। চালকদের বেপরোয়া প্রতিযোগিতার মনোভাব ও গতি রুখতে সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

রাশেদুজ্জামান রাশেদ : সাংবাদিক ও লেখক।
[email protected]