Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

শরতের অপার সৌন্দর্য কাশফুল

কালের ধারায় প্রকৃতি জগতে প্রাণের সজীবতা, রং, রূপ ও স্নিগ্ধতা নিয়ে এসেছে ঋতুরানি শরৎ। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুল দেখলেই আমরা সবাই বুঝি এসেছে শরৎ। কারণ কাশফুল শরতের আগমনের প্রতীক। বাতাসে দোলে মোহনীয় ভঙ্গিমায়। স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘ, মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ ও সাদা কাশফুল যখন বাতাসের দোলায় দুলতে থাকে তখন মনটাও যেন আন্দোলিত হয়। প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় এর আগমনী বার্তা। এই ঋতুতে পালকের মতো নরম ও ধবধবে সাদা রঙের কাশফুল ফোটে। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়।
ভাদ্র-আশ্বিন এ দুই মাস মিলেমিশে শরৎ ঋতু। শরৎ মানেই নদীর তীরে কাশফুল, গাছে গাছে শিউলি, বেলি, জুঁই, শেফালি, মালতি, টগর, হাসনাহেনা আর বিলে-ঝিলে শাপলা ফুলের সমারোহ আর লম্বা লম্বা তালগাছে পাকা তালের মিষ্টি ঘ্রাণ। সেই তাল দিয়ে তৈরি করা পিঠা, পায়েস? আর ক্ষেতে ক্ষেতে আমন ধানের বেড়ে ওঠা চারা। শরতের সকালে বয়ে চলে ঝিরিঝিরি হাওয়া। ছোট ছোট পাখিদের বেপরোয়া দাপাদাপি ও মিষ্টি কলতান! ফুটন্ত শিউলির প্রাণজুড়ানো ঘ্রাণ। শিউলি তলায় হালকা শিশিরে ভেজা দূর্বাঘাসের ওপর চাদরের মতো বিছিয়ে থাকে রাশি রাশি শিউলি ফুল। আমনের মাঠে মাঠে শিশিরসিক্ত সবুজের স্বচ্ছ শামিয়ানা! বাতাসের দাপটে অবিরাম ঢেউ তুলে যায় আমন ধানের ক্ষেতজুড়ে। নদীর তীরে শুভ্র সাদা কাশফুলের খিলখিল হাসিতে যেন তার সবটুকু সৌন্দর্য ঢেলে পড়ার উপক্রম। শরতের আকাশের মতো স্বচ্ছ আকাশ আর কোনো ঋতুতে দেখা যায় না।
বিলের জলে নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে লাল, সাদা শাপলাফুল। সকালের হালকা কুয়াশায় সেই শাপলাগুলো এক স্বপ্নিল দৃশ্যের আভাস বয়ে আনে। আলো চিকচিক বিলের জলে ফুটে ওঠে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য লীলা। পুকুরপাড়ে গাছের ডালে মাছরাঙা ধ্যান করে বসে থাকে। পুকুরের স্বচ্ছ জলে পুঁটি, চান্দা, খলসে ও ছোট প্রজাতি মাছের রুপালি শরীর ভেসে উঠলেই ছোঁ মেরে নিয়ে যায় তার লম্বা ঠোঁটে। সন্ধ্যেবেলা দিনের শেষে থেমে যায় চারপাশের কমের্কালাহল। প্রকৃতিতে নেমে আশে এক অন্যরকম আবহ। টগবগে লাল রক্তের রূপ ধারণ করে দিনের সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে। সূর্যের রক্তিম আলোর ছটায় প্রকৃতি যেন অন্যরকম রঙে নিজেকে সাজায়। পশু-পাখি নীড়ে ফিরতে থাকে।
শহুরে নাগরিকরা কতজন খোঁজ রেখেছি শরতের এই অপার সৌন্দর্যের! বিজ্ঞানের স্রোতে ভাসতে ভাসতে ভুলতে বসেছি শরতের রূপ-রস হৃদয়ঙ্গমের মানসিকতা। ব্যস্ত জীবনে চলার পথে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত এবং আধুনিকতা ও বিজ্ঞানের গহ্বরে ডুবে থাকায় শরতের সৌন্দর্যের রূপের মুগ্ধতা থেকে হয়ে যাচ্ছি বঞ্চিত। শরতের সাদা শুভ্রতা নিয়ে দিগন্তজুড়ে চোখ ধাঁধানো কাশফুলের সমাহার। শ্বেত শুভ্রতার কাশফুলের হাতছানিতে বিমোহিত ভ্রমণপিপাসুরা। কাশফুলের মাঠে ছেলেমেয়েরা মেতে উঠেছে আনন্দ উচ্ছ¡াসে। নদীর নির্মল বাতাসে শুভ্র সাদা কাশফুলের মন মাতানো দোল খাওয়া শীষ দেখতে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন সকাল ও বিকাল ঘুরে বেড়াচ্ছেন কাশবনে। কাশফুলের শুভ্রতার সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ভ্রমণ ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে নিজেদের ধরে রাখছেন ছবির ফ্রেমে।
নদীমাতৃক দেশের নদীর তীরগুলো ঘেঁষে কাশফুলের অপূর্ব সমারোহ। বাতাসে দোল খাওয়া সে অপরূপ দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়। দখিনা বাতাসে সাদা কাশফুলের ঢেউ খেলা স্রোত, ফুলের প্রস্ফুটিত রূপ-লাবণ্য প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে মনের মধুরী মিশিয়ে। ঋতুর রানি শরৎ আসে অপার ঐশ্বর্য নিয়ে। অথচ সেই সৌরভের মুগ্ধতা থেকে আমরা বঞ্চিত। ফেসবুকে ডুবে থাকায় এখন আর শরতের ভরা জোছনায় চাঁদ দেখি না। কাশবনের নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ হওয়ার সময় পাই না। শরতের রূপ লাবণ্য যাই থাকুক না কেন, ষড়ঋতুর দেশে শরৎ ঋতু আমাদের কাছে রয়ে যাচ্ছে যেন অনাদৃতই। চলুন না নগর জীবনের ক্লান্তি দূর করতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও শরতে হারিয়ে যাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে/ মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে/ তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপ-কথার/ পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপ-কথার/ পারুলবনের চম্পারে…’। সত্যি শরতের প্রকৃতি বড়ই বৈচিত্র্যময়, লাবণ্যময়ী।

মো. আরফাতুর রহমান (শাওন)
লেখক ও শিক্ষক, মিল্লাত উচ্চ বিদ্যালয়, বংশাল, ঢাকা।
[email protected]