‘সংসার’ শব্দটি হুমকির মুখে পড়ছে! আপনি, আমি বা সমাজ কি অনুভব করছে এ বিষয়টি? সন্তান জন্মদান এবং পরিচয় দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারলে কেন মানুষ সংসার করবে, কেন নারী নিরাপত্তার কথা ভাববে আর কেনই বা বহু বিবাহকে অনুৎসাহিত করবে?
সামাজিক অপরাধকে আমরা ব্রান্ডিং করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। সবাই মতামত লিখছে, হাসি তামাশা করছে কিন্তু কেউ ইমপ্যাক্ট বোঝার চেষ্টা করছে না। কোনটি অপরাধ, কোনটি আলোচনার বিষয়, কোনটি আমি লাইভ করে মানুষকে দেখাব, কোনটি গোপন থাকা দরকার কোনো কিছুতেই যেন আমাদের বাধাধরা নিয়ম নেই। শাকিব, বুবলী, অপু, পূজাতে মেতে আছে পুরো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমনি হচ্ছে গুরুত্বহীন তেমনি সমাজে ছড়াচ্ছে ভুল বার্তা।
এখানে ৩টি বিষয় :
১. অপুর সন্তান হলো। পরে অপু কেঁদে জানালেন শাকিব দায়িত্ব নিচ্ছে না।
২. বুবলী মা হয়েছেন কিন্তু কেউ জানে না। পরে জানা গেল বুবলীর সন্তানের বাবাও শাকিব।
৩. আবার পূজাকে নিয়ে কথা হচ্ছে!
শাকিবের এ বিষয়টিকে যে যেভাবেই দেখুন না কেন এখানে যার যার বিষয় বলে আমরা শুধু অপরাধগুলোকেই আড়াল করছি না বরং এমন ঘটনাকে উসকে দিচ্ছি। নারীদের অবমাননা করেও এমন আইনের আওতার বাইরে যদি সেলিব্রেটিরা থাকতে পারেন তবে সাধারণরাও এ সুযোগ নিয়ে নিতে পারে! এটি সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে।
সন্তান জন্মদান একটি পবিত্র বিষয় অথচ কত গোপনীয়তা অবলম্বন করেছেন বুবলী। বুবলী জানেন যে শাকিবের সন্তান আছে এবং তারপরও তিনি আবার শাকিবের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলেন।
তাদের এ ব্যক্তিগত বিষয়টিকে যখন সবার সামনে আনা হলো তখন তাদের ভক্তরা এ বিষয়টিকে মডেল হিসেবে দেখলে সমাজের চিত্র কেমন হবে?
অপু বিশ্বাসের সেই কান্নাভরা সংবাদ সম্মেলনের কথা সবাই ভুলে গেছেন? এসব বিষয়ের একটা আইনি ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন। সব বিষয় ব্যক্তিগত বলে তা এড়িয়ে গেলে সেটা যখন জনসমক্ষে আসে তখন তা থেকে অপরাধ বাড়ার সুযোগ তৈরি হতেও পারে। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আইন অথবা নীতিমালা দেখানো হয়তো যাবে; কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে সন্তান হওয়ার পর বাবা দায়িত্ব না নিয়ে যখন স্ত্রীকে ফেলে চলে যায় তার কষ্টটা কতটা ভয়াবহ তা সামনে থেকে না দেখলে বিশ্বাস হওয়ার নয়। শাকিবদের এ ঘটনা বহু বিবাহকে যেমন উসকে দিতে পারে, তেমনি নারীদের সম্মানের জায়গাতেও বড় ধরনের একটি ব্যত্যয় ঘটিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
শাকিব কি শুধু এই দুই সন্তানেরই বাবা? যদি তাই হয় তবে অপু এবং বুবলীকে নিয়ে সংসার কেন নয়? কেন আবার পাত্রী দেখার খবরে উত্তাল সংবাদ মাধ্যম? কেন পূজার কথাই আসছে আবার? সিরিয়াস ইস্যুগুলো যত হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে আমরা নেব ততই সামাজিক অপরাধ সংগঠনের পেছনে আমাদের মদদ বাড়বে। সেলিব্রেটি বলেই যে কেউ যা ইচ্ছা তা করতে পারে না বা বলতে পারে না।
আইন অনুযায়ী শাকিব যদি এই সন্তানদ্বয়ের বাবা হন তবে সংসার করার ক্ষেত্রে অপু বিশ্বাস বা বুবলীর সঙ্গে কেন তিনি সংসার করবেন না বা তারাই কেন শাকিবকে আর বিশ্বাসের জায়গায় রাখতে চাইছে না- এ প্রশ্নগুলোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তারা যখন সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন তখন সামাজিক প্রেক্ষাপট তারা চিন্তাই করেননি। সামাজিক দায়িত্ববোধের জায়গাটি সবাই মিলে লঙ্ঘন করতে পারে না। সমাজে যাতে ভুল বার্তা না যায় এজন্য হলেও অপরাধ শাস্তিযোগ্য হলে তা বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শিল্পী সমিতিরও একটি ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি।
সাঈদ চৌধুরী : লেখক, গাজীপুর।
[email protected]