Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

সঞ্চয়ে মূল্যস্ফীতির খাঁড়া

ucb stock regular

দেশে মূল্যস্ফীতি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা বেশি চাপে পড়ছে। ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধির নেতিবাচক ধারাবাহিকতা তার প্রমাণ। তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কিন্তু এক বছর আগেও আমানত প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। সুতরাং মানুষের মধ্যে এখন নতুন করে সঞ্চয় প্রবণতা কমেছে। বেড়েছে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ। সংশ্লিষ্টদের মতে করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে।

করোনার শুরু থেকে বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপক চাপে পড়ে। করোনার পরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা চাহিদা তৈরি হয়। পরবর্তীতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতে আবারও চাপ তৈরি হয়। মানুষের জীবন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। দেশে সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতি গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে মানুষ সঞ্চয় ভেঙে ফেলতে শুরু করে। এর প্রভাবে ব্যাংক খাতের আমানত প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা শাখার সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন অর্থসূচককে বলেন, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে আমানত প্রবৃদ্ধি কমছে এবং ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে তার‌ল্যের একটি চাপ সৃষ্টি হবে। বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ৯ শতাংশের উপরে। ঋণের সুদহারও দিতে হচ্ছে ৯ শতাংশ। তাহলে প্রকৃত সুদ দিতে হয় কত শতাংশ, তাও দেখার বিষয়। এভাবে বাংলাদেশে ঋণ খুব সহজ হয়ে গেছে। ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে ঋণের সহজলভ্যতা কমানো উচিত।

LankaBangla securites single page

জুনে বাংলাদেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, জুলাইয়ে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, আগস্টে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে দেশে ১১ বছরের মধ্যে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে ১১ লাখ ২ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৬৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ ৪ লাখ ৯ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ৬৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের রয়েছে ৪৩ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৭১ শতাংশ।

একই সময়ে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণ ৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বা ৭৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, বিদেশি ব্যাংকের ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ ঋণ রয়েছে।

গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ ঋণ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশি ঋণ প্রবৃদ্ধি এটি। আবার ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে রেকর্ড ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয় সরকার। সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে এসেছে মাত্র ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর ব্যাংক থেকে আরও ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এসব কারণে ঋণ বেড়েছে। আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ২০২৩ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ঋণের পরিমাণ ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ।

গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করে বাজার থেকে ৭৮ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ডলার বিক্রি এখনও অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ৫০ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে টাকার বাজারেও টান পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করছে ব্যাংকগুলো।

দেশের অনেক ব্যাংকে গত অর্থবছর থেকে আমানত কমছে। ফলে আমানতের প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ১১টি রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংক, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে। চলতি বছরের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে আমানত কমেছে ৩ দশমিক ০২ শতাংশ এবং সোনালী ব্যাংকে (ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো) আমানত কমেছে ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। বেসরকারী বাণিজ্যিক এবি ব্যাংকের (ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো) আমানত কমেছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের কমেছে ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং যমুনা ব্যাংকের (ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো) আমানত কমেছে দশমিক ৮৬ শতাংশ।

প্রাইম ব্যাংকের (ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো) আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে কমেছে ২ দশমিক ১১ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকে দশমিক ১৯ শতাংশ এবং এইচএসবিসিতে (ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো) আমানত কমেছে ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তানের আমানত কমেছে দশমিক ১২ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কমেছে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ।

সর্বোচ্চ মূলস্ফীতির বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকট, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা এবং নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি এত বাড়ছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিও মূল্যস্ফীতির ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। মানুষের জীবন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এসবের প্রভাব ব্যাংকিং খাতের আমানতের উপর পড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। সরকারও বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। নতুন করে আরও ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এসবের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে মূল্যস্ফীতি। মানুষ জীবন ব্যয় মিটিয়ে নতুন করে সঞ্চয় করতে পারছে না। এসবের প্রভাবে ব্যাংকিং খাতে মানুষের আমানত কমছে। পাশাপাশি একই সময়ে এই খাতের বাড়ছে ঋণ প্রবৃদ্ধি।

অর্থসূচক/মো.সুলাইমান