Bangladesh
This article was added by the user . TheWorldNews is not responsible for the content of the platform.

তুমব্রু সীমান্তে থামেনি আতঙ্ক, যুদ্ধ বিমানের আনাগোনা

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে শুনা যাচ্ছে আচমকা গুলি ও মর্টরশেলের আওয়াজ আর এপারের বারুদের গন্ধ । এতে সীমান্ত বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক কাটছে না মুটেও।

সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, গত আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি জোরেশোরে গুলির আওয়াজ আর মর্টারশেলে বিস্ফোরণ কোন মতে থামানো যাচ্ছিলো না। মাঝে মধ্যে সীমান্ত একেবারে নিস্তব্ধ। মনে হয় দুই,দেশের আলোচনা আর সিদ্ধান্তে আর কোন ধরনের আওয়াজ শুনা যবে ন। সে কল্পনাকে বাস্তবতার রূপ দিতে দিচ্ছে না মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সেনারা।

তাঁরা মাঝে মধ্যে বেপরোয়া হয়ে যুদ্ধ বিমান সীমানা লংঘন ,গুলাগুলি ও মর্টারশেলের গোলা বাংলাদেশ ভূখন্ডে নিক্ষেপ করতে একটুও পরোয়া করে না।
এসব বেআইনী কান্ড দেখলে মনে হয় যেন গায়ে পড়ে ঝগড়া।

ওই সময় সীমান্তের মানুষেরা চরম আতঙ্কের দিন পার করেছে অসহায়ত্ব জীবন নিয়ে ।
সীমান্তের জিরোলাইনের বসবাসরত লোকজনের অসহায়ত্ব জীবনের স্মৃতি গুলো আচমকা আচমকা মনে পড়লে শরীর শিউরে ওঠে এমনটি জানালেন জিরো লাইনের বসবাসরত নারী নূর বাহার।

আর এদিকে নোম্যান্সল্যান্ডের বসবাসরত প্রায় পাঁচ হাজারে মতো রোহিঙ্গাদেরও গুলাগুলি শব্দ আর মর্টারশেল ছুঁড়ার ভয়ে রাত জেগে থাকতে হয়। নোম্যান্সল্যান্ডের রোহিঙ্গা নারী কদ বানু বলেন,মিয়ানমার সরকার আমাদের গুলি মারছে,আমরা যাতে শূন্যরেখা থেকে চলে যায়। এ শূন্য রেখায় গুলি করছে,মর্টারশেলে গোলা ফাটাচ্ছে।
আবদু রহিম নামের আরেক রোহিঙ্গা বলেন,মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গোলার আঘাতে আমাদের শূন্যরেখায় ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গা মৃত্যূ হয়েছে, সে সময় আহত হয় চারজন এখনো হাসপাতালে। আমরা শূন্য রেখায় রয়েছি,এখান থেকে কোথাও যাবো না, যদি বিদেশীরাও নিয়ে যায় তাও না।শুধু নিজের দেশ মিয়ানমারে ফিরবো নাগরিক অধিকার নিয়ে।

তবে এখান থেকে পঞ্চাশ গজ দূরত্বে সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া। প্রতিনিয়ত দেখা যায় ওখানকার সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিজিপি) হাতে রাইফেল,কাঁধে মর্টারশেল নিয়ে টহল দিতে দেখা যায়। আর এসব নিয়ে গুলাগুলি ও গোলা নিক্ষেপ করছে জিরো লাইনে এবং বাংলাদেশ ভূখন্ডে।

ছবি: ভোরের কাগজ

আশারতলী সীমান্তের নজু মিয়া জানান, ঘুমধুমের তুমব্রু এলাকাটি আমাদের থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। সেখানে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার ভূখন্ডে প্রতিনিয়ত গুলাগুলি, হেলিকপ্টার থেকে সীমান্ত ঘেঁষে বোমা নিক্ষেপ আর জিরো লাইনে মর্টারশেল ছোঁড়ে আসে আমাদের ভূখন্ডে এসব খবরাখবর ছড়িয়ে পড়লে তখন ভয়ে আমাদের রাত জেগে থাকতে হয়। কারন আমরাও সীমান্তে বসবাস করে আসছি দীর্ঘবছর ধরে।

তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের ভূখণ্ডে এই চলমান যুদ্ধের মতো ঘটনায় মাঝে মধ্যে আমাদের ভূখন্ডে মর্টারশেলে গোলা বিস্ফুরণ হয়ে নিহত ও আহত খবর শুনা যায়।
তাই আমরা এসব অপ্রীতিকর ঘটনা যেন সংঘটিত না হয় সেই বিহীত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ঘুমধুমের আশপাশের প্রায় ১২টি পাড়ার লোকেরা ভয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুণছে।

তুমব্রু বাজার ব্যবসায়ী আবদু রহমান, গ্রাম পুলিশ সদস্য আব্দুল জব্বার,রোহিঙ্গা আব্দুস সালাম,দক্ষিণ চাকঢালার চেরার মাঠের মাওলানা শামশু, মোজাফফর, আশারতলীর এলাকার জামছড়ি মাষ্টার জাফর আলম বলেন, শুধু গোলাগুলির শব্দই আমাদের অস্থিরতা আর উত্তেজনার বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে
সমস্যা মিয়ানমারের।সন্ত্রাস দমন এবং সরকার বিরোধী যুদ্ধ এবং যুদ্ধক্ষেত্র সবকিছুই মিয়ানমার ভূখণ্ডে। ভুল নিশানা বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কয়েকটি মর্টার শেল শুণ্যরেখায় এসে পড়েছিল।বাংলাদেশ সরকারের কড়া প্রতিবাদ,রাষ্ট্রদূতকে তলব করার পর আর এপারে গুলির খোসা বা মর্টার শেল এসে পড়েনি। সম্ভবত তারা এবিষয়ে অত্যধিক সতর্কতা অবলম্বন করছে। এরপরও আচমকা গুলি আওয়াজ আর মর্টারশেলে বিকট শব্দে এপারের সীমানায় বসবাসরত মাটির ঘর গুলো কম্পনের হেঁটে গেছে কয়েকটি মাটির ঘরে। তাই সীমান্তে বসবাস করতে গেলে এসব টুকিটাকি সমস্যা হয়ে থাকে।
তবে এ সমস্যাতে দু,দেশে যুদ্ধা লাগার মতো তেমন কিছু নয়।
সুতরাং,গুজব ছড়িয়ে বা মিয়ানমার অভ্যন্তরের যুদ্ধকে বাংলাদেশ সীমান্তের যুদ্ধ বলে অতি উৎসাহীত হয়ে চালিয়ে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে তারা মন্তব্য করেন।
চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্তের ৩শ পরিবারে মধ্যে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে দেড়শ তালিকা চূড়ান্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে সীমান্তে আচমকা গুলি আওয়াজ আর যুদ্ধ বিমান সীমা লংঘনে জিরো লাইনে বিজিবি সর্তক অবস্থানে পুরো সীমান্তে সিলগালার মতো অবস্থানে রয়েছে। জবাবদিহি ছাড়া সীমান্তের মানুষ চলাফেরা করতে পারছে না।
আর এদিকে,
১৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে একাদিক মর্টারশেলের প্রকট আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে আশাপাশের তুমব্রু,কোনারপাড়া, বাইশফাঁড়ি, তুমব্রুর হেডম্যান পাড়া,ভাজা বুনিয়া,মধ্যমপাড়া,উত্তর পাড়া,বাজার পাড়া,গর্জনবুনিয়া, কোলালপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ চাকঢালার চেরার মাঠ,সাপমারা ঝিরি,জামছড়ি,জারুলিয়াছড়িসহ ১২ পাড়ার মানুষের।
তবে এবিষয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস এই প্রতিবেদকে জানান, তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়ার তালিকা কার্যক্রম প্রক্রিয়া চলছে। তবে এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। তিনি আরও বলেন, সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের কীভাবে নিরাপদে রাখা যায় সে ব্যাপারে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে সীমান্ত পরির্দশনে আসেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও পুলিশ সুপার মো: তারিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য,গত ২৮ আগষ্ট বাংলাদেশ -মিয়ানমার সীমান্তের জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে দু,টি মর্টারশেল এসে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই থেমে থেমে রাত,দিন দুপু, সকাল গোলাগুলির আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল। বিস্ফোরণে কম্পিত হচ্ছে উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি,রেজু বরইতলীসহ কয়েকটি সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম।এতে চরম আতঙ্কে দিন পার করছে সীমান্তের এলাকার বাসীন্দারা।
এছাড়া মাইন বিস্ফোরণ ও মর্টারশেলের ১জন নিহত এবং একজনের পা উড়ে যায়।