কোভিড-১৯–এর প্রাথমিক অবস্থায় চীনের অব্যবস্থাপনার বিষয় তুলে ধরেছে সিএনএন। ছবি : সংগৃহীত
উহান থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাসের বিষয়ে প্রথম দিকে তথ্য লুকিয়েছিল চীন। ‘দ্য উহান ফাইলস’ নামের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের তথ্য লুকানো ও যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকার কারণে ভাইরাসটি মহামারি আকার ধারণ করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চীন সরকার শুরুতে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। কোভিড-১৯ এর প্রাথমিক অবস্থায় চীনের অব্যবস্থাপনার বিষয়টি স্পষ্ট। এ বছর ১০ ফেব্রুয়ারি বেইজিং থেকে উহানের সম্মুখসারির চিকিৎসাকর্মীদের উদ্দেশে কথা বলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরে নিরাপদ ঘরে বসে চীনা প্রেসিডেন্ট করোনায় নিহত উহানবাসীর জন্য সান্ত্বনা দেন। নতুন রোগটি ঘিরে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের মুখে এ বিষয়টি আরও বেশি খোলাসা করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ওই দিনই চীনা কর্তৃপক্ষ দেশটিতে ২ হাজার ৪৭৮ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানায়। ওই সময় পর্যন্ত বিশ্বে করোনা শনাক্ত হয় ৪০ হাজারের কিছু বেশি।
ওই সময়ে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৪০০ জনের কম। কিন্তু এখন সিএনএনের হাতে অভ্যন্তরীণভাবে ফাঁস হওয়া নথি এসেছে। ওই নথি অনুযায়ী, চীন ওই সময়ে করোনা শনাক্তের যে সংখ্যা দেখিয়েছিল, তা খণ্ডচিত্র মাত্র।
অনুসন্ধানে সিএনএন জেনেছে, চীনা কর্মকর্তারা তাদের অভ্যন্তরীণভাবে পাওয়া তথ্যের চেয়ে বিশ্বকে আরও আশাবাদী তথ্য দিয়েছিলেন। চীনা ব্যবস্থায় নিশ্চিত রোগীদের নির্ণয় করতে গড়ে ২৩ দিন সময় লেগেছে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় দেখা গেছে, অপর্যাপ্ত তহবিল, কম লোকবল, দুর্বল মনোবল এবং আমলাতান্ত্রিক মডেল ব্যবস্থা চীনের প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। হুবেই প্রদেশে ডিসেম্বরের শুরুতে ইনফ্লুয়েঞ্জার একটি বড় প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, যা সামনে আসেনি।
হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ নথিটি গোপনীয় হিসেবে চিহ্নিত। তাতে ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯১৮ জনের করোনা শনাক্তের কথা বলা হয়েছে। দেশটির সরকারিভাবে ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে ফাঁস হওয়া নথিতে করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। সিএনএন বলছে, করোনা মহামারির প্রথম দিকে করোনার ভয়াবহতাকে খাটো করে দেখেছিল দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো চীন সরকারের বিরুদ্ধে করোনার তথ্য লুকানোর অভিযোগ আনে। তবে চীন তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যায়ের তথ্য অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত চীনে মোট করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৯২ হাজার ৯০২ জনের। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৪ হাজার ৭৪৩ জন।